Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলকে ‘রুখতেই’ বিজেপি

সংখ্যালঘু প্রধান জেলা হওয়া সত্ত্বেও ‘তৃণমূল ঠেকাতে’ এই ‘অনিচ্ছা’র ভোট পেয়েই বিজেপি এ বার অবাক করেছে জেলায়!

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রাণময় ব্রহ্মচারী
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০২:০৬
Share: Save:

বহরমপুরের গোয়ালজান এলাকার বাসিন্দা স্বপন কর্মকার গত পঞ্চায়েতে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।

এ বার তার ‘বদলা’ নিয়েছেন তিনি। কিঞ্চিৎ আড়াল রেখেই বলছেন, ‘‘বুঝতেই তো পারছেন, কাকে ভোট দিয়েছি। এই জবাবটা দিতেই হত!’’

বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকার স্কুল শিক্ষিকা অবশ্য কোনও রাখঢাক রাখছেন না। সটান বলছেন, ‘‘আমার বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি— দু’দিকেই কট্টর সিপিএম। কিন্তু এ বার যখন দেখলাম, বামেদের উপরে ভরসা রাখলে ভোটটা নষ্ট করা হবে, তখন তৃণমূলকে ঠেকাতে বিজেপি’কেই বেছে নিলাম। খারাপ লেগেছে, কিন্তু তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে এ ছাড়া উপায় ছিল না।’’

ছবিটা এমনই, টুকরো টুকরো ‘বাঁচতে চাওয়া’র গল্প হয়ে ছড়িয়ে আছে মুর্শির্দাবাদে। সংখ্যালঘু প্রধান জেলা হওয়া সত্ত্বেও ‘তৃণমূল ঠেকাতে’ এই ‘অনিচ্ছা’র ভোট পেয়েই বিজেপি এ বার অবাক করেছে জেলায়!

২০১৪ সালে ২,৭৯৪৭৬ থেকে পৌঁছে গিয়েছে, ৭,৬০০১৭-এ। জেলায় আসান পায়নি বটে, কিন্তু ভোট বেড়ে গিয়েছে এক ধাক্কায় তিন গুনেরও বেশি। ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষের বসবাস যে জেলায় সেখানেই তাদের ভোট ব্যাঙ্ক যে এমন স্ফীত হয়ে উঠবে তা বিজেপি নিজেও কল্পনা করতে পারেনি। জেলা বিজেপি’র সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমাদের জেলাতেও যে এমন ভাল ফল হবে তা ভাবা যায়নি। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে শুধু মুর্শিদাবাদ বিধানসভায় আমাদের ২৫ হাজার ভোটে লিড হয়েছে, জঙ্গিপুরের দলীয় প্রার্থী মাফুজা খাতুন কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় হয়েছেন, আর যাই হোক প্রমাণ হল, এটা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ভোট নয়।” তা হলে কার ভোট? উত্তর স্পষ্ট না হলেও, প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে— ২০১৪ সালে জঙ্গিপুরের বিজেপি প্রার্থী সাকুল্যে ৯৬ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়েছিলেন, এ বার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৬ ভোটে। বহরমপুর কেন্দ্রে ২০১৪ সালে বিজেপি প্রার্থী ৮১ হাজার ৬৫৬ ভোট পেয়েছিলেন, এ বার কৃষ্ণ জোয়ারদারের ঝুলিতে জমা পড়েছে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৮টি ভোট। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে ২০১৪ সালে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ১ হাজার ৬৯টি, এ বারে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী হুমায়ুন কবীরের ভোট বাক্সে পড়েছে ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৭৪৫ ভোট।

বিজেপি’র এক জেলা নেতার ব্যাখ্যা— “মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় দু-দুজন সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়াটা আমাদের মাষ্টারস্ট্রোক হয়েছে।” তা অবশ্য পাত্তা দিচ্ছেন না বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী, “ধর্মীয় সমীকরণের রাজনীতির ফলাফলে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, এটা আমার কাছে

অশুভ সঙ্কেত।”

তবে এব্যাপারে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি, ‘‘উনিই (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তো খাল কেটে কুমীর আমদানি করলেন!’’ তবে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি ও দলের জেলা মুখপাত্র অশোক দাসের দাবি, ‘‘বিজেপি’র ভোট বাড়া মানেই তৃণমূল বিরোধী ভোট বাড়ল এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিপজ্জনক রাজনীতি করেছে, তা আমাদের জেলাতেও ঘটেছে সেটাই ভয়ের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE