ওহিদা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
বিয়েবাড়ির হইচই বদলে গেল কান্নায়। দিদির বিয়ের দিনই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল বোন ওহিদা খাতুনের (১০)। শুক্রবার সকালে সুতির আহিরণের বড় মসজিদপাড়ার ঘটনা।
বাড়িতে বিয়ে বলে ক’দিন ধরেই কায়েম শেখের বাড়িতে ছিল উৎসবের মেজাজ। দিদির বিয়েতে সকলের মতোই সাতসকালে আনন্দে মেতে উঠেছিল খুড়তুতো বোন ওহিদা। বাড়ির উঠোনে অন্যদের সঙ্গে নাচানাচি করছিল সে। পাশেই চলছিল জেনারেটর। সেই জেনারেটরের চাকাতে ওড়না জড়িয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে আহিরণ ব্লক হাসপাতাল ও পরে জঙ্গিপুর হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
এই অবস্থাতেই কোনও রকমে সারতে হয়েছে দিদি মুনি খাতুনের বিয়ে। জঙ্গিপুরের নবকান্তপুর থেকে কয়েক জন বরযাত্রী ও আত্মীয়-পরিজনদের উপস্থিতিতেই কোনওরকমে বিয়ে শেষ করে দুপুরের মধ্যেই তাঁদের বিদায় করার পরে ওহিদার দেহ এসেছে বাড়িতে।
ওহিদার বাবা মুকুল শেখ রাজমিস্ত্রির কাজে কলকাতায় থাকেন। মা ফুলেরা বিবি বলছেন, “খুড়তুতো দিদি হলেও নিজের দিদির বিয়ের মতোই এ দিনের বিয়ে নিয়ে আমার দুই মেয়ে আনন্দে মেতেছিল। গ্রামেরই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পড়ত ওহিদা। দু’দিন থেকে স্কুলেও যাচ্ছিল না বিয়ের আনন্দে।” ওহিদার জেঠু মীরচাঁদ শেখ বলছেন, “নাচানাচি করতে করতে জেনারেটরের কাছে পড়ে যায় ওহিদা। ওড়না জড়িয়ে যায় জেনারেটরের চাকায়।” ওহিদার আর এক আত্মীয় মইমুর শেখ বলছেন, “সব কাজ ফেলে ওকে নিয়ে ছুটে যাই আহিরণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেই ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সব শেষ।”
বিয়ে বাড়িতে ততক্ষণে হাজির বর ও বরযাত্রীরা। বিয়ের অনুষ্ঠানও শুরু হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। মীরচাঁদ বলছেন, “ভেবেছিলাম, বিয়ে মিটে গেলেই মৃত্যুসংবাদটা দেব। কিন্তু তার আগেই খবর পৌঁছে যায় বাড়িতে। কলকাতায় খবর দেওয়া হয় ওহিদার বাবা মুকুলকে। সে বাড়ি ফিরলে রাতেই কবর দেওয়া হয়েছে।”
যার বিয়েকে ঘিরে বাড়িতে এ দিনের উৎসব সেই মুনি খাতুনের বাবা কায়েম শেখ বলছেন, “কী ভেবেছিলাম, আর কী হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy