Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কান ফুঁড়ে দুল পেয়ে ফিরল না আর মেয়ে

দিনভর খোঁজাখুঁজির পরে, বৃহস্পতিবার রাতে, তার গ্যাঁজলা ওঠা দেহ মিলল ধান খেতের পাশে। সারা মুখ কাদা-ধুলোয় ভেসে যাচ্ছে। আর ছোট্ট মেয়েটির কান আর পা থেকে উধাও দুল আর তোড়া জোড়া।

সুরাইয়া খাতুন।

সুরাইয়া খাতুন।

মৃন্ময় সরকার
লালগোলা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

বড় খুশি হয়েছিল মেয়ে। কন্যা-অন্ধ বাবা কষ্টের সঞ্চয় থেকে কানের সোনার দুল আর পায়ের তোড়া গড়ে নিজের হাতে পড়িয়ে দিয়েছিলেন মেয়েকে। নেচে নেচে তা পড়েই বেরিয়ে গিয়েছিল সুরাইয়া খাতুন (৬)। আর ফেরেনি।

দিনভর খোঁজাখুঁজির পরে, বৃহস্পতিবার রাতে, তার গ্যাঁজলা ওঠা দেহ মিলল ধান খেতের পাশে। সারা মুখ কাদা-ধুলোয় ভেসে যাচ্ছে। আর ছোট্ট মেয়েটির কান আর পা থেকে উধাও দুল আর তোড়া জোড়া।

উঠোনের এক কোনে বসে সুরাইয়ার বাবা নাগাড়ে আক্ষেপ করে চলেছেন, ‘‘কেন যে তোরে সোনার দুল গড়িয়ে দিলাম রে!’’ পুলিশেরও অনুমান, ওই সামান্য হাজার ছয়েক টাকার দুলের লোভেই খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে। তা বলে, ছিনতাইয়ের পরে খুন? পুলিশ বলছে, ‘যে এ কাজ করেছে, সে সুরাইয়ার চেনা। তাই কোনও ঝুঁকি নেয়নি সে। খুন করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে।’

মাস ছয়েক আগে কান ফোঁড়া’র অনুষ্ঠান ছিল বাড়িতে। গাঁ গঞ্জের এই রীতি নতুন নয়। দুল পরতে মেয়ের কান ফুটো করার পরে হাত পয়সা এলে পরে তার জন্য গড়ে দেওয়া হয় নিয়মরক্ষার গয়না। ধান বেচে হাতে কিছু টাকা আসতেই মেয়ের জন্য তাই সাড়ে ছ’হাজার টাকা দিয়ে সোনার দুল গড়ে দিয়েছিলেন রফিকুল। তারই পরিণতিতে খুন। লালবাগ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বরুণ বৈদ্য বলছেন, ‘‘মেয়েটির পরিবারের দাবি, ওই দুল জোড়ার জন্যই খুন করা হয়েছে তাকে। তবে তার উপরে অন্য কোনও অত্যাচার হয়েছে কি না এখনও স্পষ্ট নয়। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’লালগোলার বিলবোরাকোপরা ছোট্ট গ্রাম। কয়েক বিঘা জমিতে ধান আর মরসুমি সব্জি বেচে রফিকুলের সংসার। সোনার দুল গড়ে দেওয়ার পরে মেয়ের উল্লাস দেখে খুশি হয়েছিলেন তিনিও। বলছেন, ‘‘মেয়েটাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলাম, দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছিল। স্বপ্ন দেখতাম পড়াশোনা করবে। সব দপ করে নিভে গেল।’’ সোনার দুল, রুপোর পাশার মূল্য তো কম নয়। মুর্শিদাবাদ জেলায় সামান্য দশ টাকার জন্যও কিশোর খুনের নজির অবশ্য রয়েছে। রয়েছে এমনই সামান্য মূল্য ছিনিয়ে নিতে খুন-খারাপির নিরন্তর উদাহরণ। সেই তালিকায় সুরাইয়া-খুন শেষ সংযোজন। পুলিশের অনুমান, খুব চেনা কেউ, তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই দুল আর তোড়া ছিনিয়ে নিয়েছিল। মেয়েটি হয়ক কান্নাকাটি করছিল। তার জেরেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Death Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE