Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

তাজিয়ার জৌলুস এলাকার গর্ব

লালবাগের শিয়া নবাবদের বংশধররা আবার বরাবরের মতো এবার, শুক্রবার হাজারদুয়ারি প্যালেস লাগোয়া ইমামবাড়ি থেকে বুক পিঠ চাপড়ে ‘হায় হাসান! হায় হোসেন!’-এর মতো শোক গাথা গেয়ে মাতম তুলে খালি পায়ে পৌঁছে গিযেছেন প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে আমানিগঞ্জে ভাগীরথীর পাড়ে নবাবি আমলের তৈরি করা করবালার মাঠে।

আগুন-মাতম। লালবাগে। নিজস্ব চিত্র

আগুন-মাতম। লালবাগে। নিজস্ব চিত্র

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

সালার, ভরতপুর, রঘুনাথগঞ্জে মহরমের দিন শোকের শোভাযাত্রায় তাজিয়া মূল আকর্ষন। যার যত বড় তাজিয়া, তার তত বুক ফুলে যায় গর্বে। সালার, ভরতপুর, কান্দিতে মহরম পালনের যে রীতিনীতি, তার উলোট পুরাণ ভাগীরথীর পূর্বপাড়ের বাগড়ি এলাকার বেলডাঙা, রেজিনগর, বহরমপুর, হরিহরপাড়া, ইসলামপুর, ড়োমকল, লালগোলা, ভগবানগোলা এলাকায়। এই সব এসাকায় লাঠিখলা ও তরোয়াল খেলাটাই মহরম মাসের মূল আকর্ষণ। লাঠিখেলা ও তরোয়াল চালানো আসলে আরব মুলুকের কারবালার ময়দানে এজিদ বাহিনীর সঙ্গে ইমাম হোসেন বাহিনীর যুদ্ধের নকল মাত্র।

লালবাগের শিয়া নবাবদের বংশধররা আবার বরাবরের মতো এবার, শুক্রবার হাজারদুয়ারি প্যালেস লাগোয়া ইমামবাড়ি থেকে বুক পিঠ চাপড়ে ‘হায় হাসান! হায় হোসেন!’-এর মতো শোক গাথা গেয়ে মাতম তুলে খালি পায়ে পৌঁছে গিযেছেন প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে আমানিগঞ্জে ভাগীরথীর পাড়ে নবাবি আমলের তৈরি করা করবালার মাঠে। ওই ৪ কিলোমটার রাস্তা পার হতে শোকসন্তপ্ত শোভাযাত্রা সময় লেগেছে প্রায় ৭ ঘণ্টা। খালি পায়ে শোকে বিভোর ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ক্লান্ত মানুষদের দু’দণ্ড শান্তি দিতে প্রতি বছরের মতো এ বারও ‘সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতি’ সারাক্ষণ গোলাপ জল ছিটিয়েছেন। সুসজ্জিত ধবধবে সাদা দুলদুল ঘোড়ার পিছনে তাজিয়া ও প্রাচীন যুদ্ধাস্ত্রের স্মরকে সমৃদ্ধ ছিল শোকপালনের নবাবি শোভাযাত্রা।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুন্নি সম্প্রদায়ের অনেকে ‘আসুরা’ হিসাবে পালন করেছেন রোজার উপবাস মাধ্যমে। দিনের শেষে লৌকিক রীতি মেনে অনেক এলাকায় ক্ষীর ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ইরাকের ফুরাৎ নদীর পাশে কারবালা প্রান্তরের যুদ্ধ ছাড়াও ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার পর ও প্রতিষ্ঠার আগে মুসলিম মতে তিনশোরও বেশি স্মরনীয় ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন পৃথিবী স়্ষ্টি হয়েছে, আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাঁকে মর্তে পাঠানো হয়েছে, কূখ্যাত শাসক ফারাও, বা ফেরাউনের সলিল সমাধি হয়েছে, নুহ, অর্থাৎ নোয়া নবীকে বিধ্বংসী প্লাবন থেকে রক্ষা করা হয়েছে। এ রকম ৩১৩টি উল্লেখ যোগ্য ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন মুললিমদের প্রায় সব সম্প্রদায়। এ কারণে এই দিনটিকে অনেক মুসলিম ‘আসুরা’, অর্থাৎ মর্যাদার দিন হিসাবে পালন করে। ‘সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধরণ সম্পাদক স্বপন কুমার ভট্টাচার্যের মতে অন্য এক তাৎপর্যও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘শোকপালনের অনুষ্ঠান ঘিরে জেলার নানা এলাকায় মেলা হওয়ায় দু’ দিনের জন্য হলেও কেনাকাটার ফলে লেনদেনের উন্নয়ন ঘটে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muharram Tajia Glamour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE