Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অভিমানী বয়ঃসন্ধি, পথ হাতড়াচ্ছেন অভিভাবকেরা

পিকু একা নয়, গত কয়েক মাসে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে কখনও অবসাদ, কখনও অভিমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বয়ঃসন্ধির গণ্ডী না পেরনো বেশ কয়েক জন ছেলেমেয়ে।  তার পরে কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থাও করে কিছু স্কুল। কিন্তু তার পরেও এমন সামান্য কারণে পিকুদের চলে যাওয়া দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের।  

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

আপাতত নীল তিমি ভেসে গিয়েছে সমুদ্দুরে। কিন্তু বয়ঃসন্ধির ঢেউ মোবাইলের হাত ধরে মাথা কুটছে এখনও। কখনও টেম্পল রান, সাবওয়ে সার্ফার, ক্যান্ডি ক্রাশ— নিতান্তই মোবাইলের দুর্বার সব খেলা।

আর সেই খেলায় বয়ঃসন্ধি এতটাই বুঁদ, কখনও কখনও মাথায় ওঠে নাওয়া-খাওয়া, লেখাপড়া। ছেলের এমন কাণ্ডকারখানা বাবা-মায়ের ভাল লাগার কথা নয়। ভাল লাগেনি নবদ্বীপের মাজদিয়া-পানশিলার স্কুলমাঠপাড়ার অর্চনা দাশের। তাই নিয়ে সোমবার দুপুরে ছেলেকে বকাবকিও করেছিলেন।

তার কিছুক্ষণ পরেই বলরাম দাশ ঘরে ঢুকে দেখেন, সিলিং ফ্যানে ঝুলছে ছেলে অপূর্ব দাশের (১৪) দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মায়ের বকুনির পরে অভিমানে আত্মঘাতী হয়েছে নবম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। স্থানীয় ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের ছাত্র অপূর্বকে সকলেই চিনতেন পিকু নামে।

পিকু একা নয়, গত কয়েক মাসে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে কখনও অবসাদ, কখনও অভিমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বয়ঃসন্ধির গণ্ডী না পেরনো বেশ কয়েক জন ছেলেমেয়ে। তার পরে কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থাও করে কিছু স্কুল। কিন্তু তার পরেও এমন সামান্য কারণে পিকুদের চলে যাওয়া দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জানা গিয়েছে সোমবার দুপুরে পিকু ঘরে মোবাইলে গেম খেলছিল। তার মা, অর্চনা অনেকক্ষণ ধরে তাকে স্নান করতে যেতে বলে ছিলেন। কিন্তু মোবাইলে মগ্ন পিকু মায়ের কথায় কান দেয়নি। ততক্ষণে বেলা গড়িয়ে প্রায় তিনটে বেজে যায়। এরপরে পিকুকে বকাবকি করেন অর্চনা। ছেলেকে স্নানের জন্য তাগাদা দিয়ে বাড়ির কাজ করতে থাকেন।

ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরে আসেন পিকুর বাবা। তিনি ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। ডেকেও সাড়া মিলছে না ছেলের। ভাঙা হয় দরজা। দেখা যায়, শোওয়ার ঘরে সিলিং থেকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে পিকু। তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় মহেশগঞ্জ হাসপাতালে। কিন্তু পিকুকে বাঁচানো যায়নি।

অর্চনা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। বলরাম দাশ গামছা-লুঙ্গি ফেরি করেন মায়াপুরে। বড় ছেলে ভিনরাজ্যে কাজ করে। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পড়াশোনায় সাধারণ মানের পিকু বেশ ছটফটে ও মিশুকে ছিল। তাই বলে সে সামান্য এই কারণে যে এমন কাণ্ড করে বসবে ভাবতে পারছেন না কেউই। পড়শি আশিস ঘোষ বলছেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা সকলেই স্তম্ভিত! ছেলেমেয়েরা ভুল করবে, অন্যায় করবে। বাবা-মা সেই ভুল শুধরে দেবেন, শাসন করবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। তাই বলে ছেলেমেয়েরা যদি দুমদাম এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, তা হলে আমাদের করণীয় কী?’’

নবদ্বীপের আরসিবি সারস্বত মন্দির প্রধান শিক্ষক বিজনকুমার সাহা বলছেন, ‘‘এই বয়ঃসন্ধিকে সামলানোটাই এই মুহূর্তে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকেই আরও সচেতন হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE