Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচটি রুমালের দাম পাঁচ হাজার টাকা!

কাজ করার সময় সুতির যে রুমালে তাঁরা হাত মোছেন, এই সময় সেগুলিই একেকটি বিক্রি হয় কমপক্ষে হাজার দেড়েক টাকায়। ওই ঘরের মেঝেয় পেতে রাখা মাদুরের দাম তো এই সময় রীতিমতো অগ্নিমূল্য। সারা বছরের এই পড়ে পাওয়া ধুলো বিক্রি করেই এই পড়ে পাওয়া চোদ্দো আ‌না!

সংগ্রহ: সোনার দোকানে চলছে ঝাড়পোঁচ। নিজস্ব চিত্র

সংগ্রহ: সোনার দোকানে চলছে ঝাড়পোঁচ। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

পাঁচটি রুমালের দাম পাঁচ হাজার টাকা।

চমকে উঠলেন! বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এই দামেই এক-একটা রুমাল বিকোচ্ছে বহরমপুরের খাগড়া এবং বেলডাঙার সোনাপট্টিতে। সৌজন্যে ‘নিহারা’। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে বাড়তি লাভের আশায় যা নিয়ে খুশির হাওয়া স্বর্ণশিল্পীদের মধ্যে।

সোনা পাড়ার খবর, নীহারিকা শব্দ থেকেই চলতি নাম পেয়েছে ‘নিহারা’। স্বর্ণশিল্পীদের কাছে ওই শব্দটিই নতুন সুর বেঁধে দেয় বছরে দু’বার, পয়লা বৈশাখ আর বিশ্বকর্মা পুজোর আগের বিকেলে। সারা বছর স্বর্ণশিল্পীরা যে ঘরে বসে কাজ করেন, সেই ঘরের ‘ধুলো’কেই বলা হয় নিহারা। বছরে দু’বার ওই ধুলো বিক্রি করেই বাড়তি পয়সার মুখ দেখেন স্বর্ণব্যবসায়ীরা।

কাজ করার সময় সুতির যে রুমালে তাঁরা হাত মোছেন, এই সময় সেগুলিই একেকটি বিক্রি হয় কমপক্ষে হাজার দেড়েক টাকায়। ওই ঘরের মেঝেয় পেতে রাখা মাদুরের দাম তো এই সময় রীতিমতো অগ্নিমূল্য। সারা বছরের এই পড়ে পাওয়া ধুলো বিক্রি করেই এই পড়ে পাওয়া চোদ্দো আ‌না! অনেকেই এই টাকায় পুজোর বাজারও সেরে ফেলেন। জেলার নানান সোনা পট্টিতে এটাই রেওয়াজ। ভাদ্রের শেষে বিশ্বকর্মা পুজোর আগে এই নিয়ে মেতে ওঠে স্বর্ণশিল্পী থেকে সোনা কারবারিরা। খাগড়ার সোনাপোট্টি বা বেলডাঙার সোনাপট্টিতে এ নিয়ে চর্চার অন্ত নেই।

‘নিহারীকা’র অর্থ বাষ্পীয় পদার্থ। যা সহজে চোখে দেখা যায় না। এই শব্দ থেকেই ‘নিহারা’ শব্দ প্রচলিত সোনার বাজারে ঝলমল করছে। সোনার গহনা তৈরি করতে পাঁচটি স্তর পার করতে হয়। প্রথমে মাপ মতো সোনা কাটা, পরে নকশা, তার পরে পালিশ এবং সেটিং। এই স্তর পেরিয়ে আসতে সোনার গুঁড়ো বাতাসে ভেসে মাটিতে ঝরে পরে। সেটা কখনও মাটিতে পাতা মাদুরে, কম্বলে কখনও বা গায়ের জামা, প্যান্টে। স্বর্ণ শিল্পীরা কাজ করতে করতে খাওয়ার আগে হাত মুছে নেন রুমালে। বা তারা কাজ শেষ করে হাত মোছেন রুমালে। এই মাদুর, দোকানের ধুলো,ব্যবহৃত রুমাল বিক্রি হয় প্রচুর দামে। যারা এই ধুলো কেনে তারা রুমাল ও মাদুরও কেনেন। সোনার রুমাল নিয়ে সুতির রুমাল দেওয়া হয়। পরের বার সেটাই নেওয়া হবে এক হাজার বা তার বেশি দামে। পুরনো মাদুর বদলে নতুন মাদুর। এই ধুলো বিক্রি কোথাও লক্ষ টাকাও পার করে। যার কারখানায় বেশি শ্রমিক বা স্বর্ণশিল্পী তার নিহারার দাম তত বেশি। এই নিয়ে সব ধরনের স্বর্ণ শিল্পীদের মনে এই সময় একটা উৎসবের আকার নেয়। এই পরে পাওয়া টাকা দিয়ে মূলত পুজোরবাজার সারে স্বর্ণ শিল্পীরা।

বেলডাঙার প্রবীন স্বর্ণশিল্পীদের অন্যতম কিশোর ভাষ্কর বলেন, ‘‘শুধু নিহারা নয়, স্বর্ণশিল্পীদের ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিসও চড়া দামে বিক্রি হয়। পাঁটটা রুমাল পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তার থেকে দাম বাড়তে পারে কমে না। অনেক দোকানে লক্ষাধিক টাকার বেশি দামে নিহারে বিক্রি হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE