এই ধরুন। মাজদিয়া বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
খাকি উর্দি পথ আটকে লাল গোলাপ হাতে তুলে দিতেই কাঁচুমাচু হয়ে গেলেন চুল উড়িয়ে মোটরবাইকে ছুটে আসা যুবক। জিভ কেটে বললেন, “আর হবে না স্যার, এ বার থেকে ঠিক হেলমেট পরে বেরোব।”
বুধবার সকাল। মাজদিয়া বাজার।
সবুজ স্কুটি নিয়ে দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে আসছিলেন এক মাঝবয়সী। পিছনে এক সঙ্গী। তাঁকেও গোলাপ ধরানো হল। পিছনে দাঁড়িয়ে এক পাল স্কুলের ছেলেমেয়ে তখন হিহি করে হাসছে। কী আর করা! লাজুক মুখে গোলাপ নিতেই হয়। বলতেও হয়— ‘‘এ বার থেকে ঠিক হেলমেট পরব!’’
গত সপ্তাহ দুয়েক পথে পুলিশের রুদ্ররূপই দেখেছে নদিয়া। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিপজ্জনক ভাবে মোটরবাইক ও অন্য গাড়ি চালানোর অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগে দুর্ঘটনার পরে অন্যান্য ধারার সঙ্গে এই ধারা প্রয়োগ করা হত। যদিও ধারাটি জামিনযোগ্য হওয়ায় থানা থেকেই জামিন মেলে। কিন্তু মামলা গড়ায় আদালতে। আইনে ১৫ দিন থেকে ৬ মাসের জেল হওয়ার বিধানও আছে। তা ছাড়া, গাড়ি যে বাজেয়াপ্ত হয় তা আদালতে গিয়েই ছাড়িয়ে আনতে হয়। হ্যাপা কম নয়।
পুলিশকর্তারা মনে করছেন, কড়া নজরদারি চালানো গেলে, ধরপাকড় চললে এবং আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে হলে অনেক বেপরোয়াই বিপদ বুঝে সামলে চলবে। কিন্তু এ দিন কার্যত তার উল্টো পথে হাঁটল পুলিশ ও মাজদিয়া ব্লক প্রশাসন। যদিও বেপরোয়া সওয়ারি নয়, এ দিন ধরা হয়েছে শুধু হেলমেট ছাড়া বেরিয়ে পড়া বাইক-স্কুটি সওয়ারিদের। খাকি উর্দির সঙ্গে পথে নেমেছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। ৩৭ জন হেলমেট-হীন সওয়ারিকে গোলাপ ধরানো হয়েছে।
শুধু গোলাপে যে চিঁড়ে ভিজবে না, তা অবশ্য পুলিশও ভাল জানে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশাপাশি শহরের ভিতরেও তীব্রগতিতে বাইক চালাতে দেখা যায় অনেক উঠতি যুবককে। জাতীয় সড়ক সংলগ্ন থানার পুলিশ অফিসারদের দাবি, জাতীয় সড়কে যত বাইক দুর্ঘটনা হয় তার সিংহ ভাগই জোরে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বাইক চালানোর কারণে।
এত দিন জোরে ও বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে পুলিশ মোটর ভেহিকলস অ্যাক্টের ১৮৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী দু’হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিত। জেলা পুলিশের কর্তাদের কথায়, “সাধারণত যারা বেপরোয়া ভাবে বাইক চালায়, তাদের বেশির ভাগই পয়সাওয়ালা ঘরের ছেলে। সহজেই জরিমানা দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায় তারা। এটাকে কোনও শাস্তি বলেই মনে করে না। কিন্তু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে এবং জেলের সম্ভাবনা থাকায় তারাও সমঝে যেতে শুরু করবে।”
কিন্তু ডান্ডা ছেড়ে ফুল হাতে হঠাৎ কেন এই গাঁধীগিরি?
পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা গোড়ায় ভাল ভাবে বুঝিয়ে সচেতন করতে চাইছি। তাতে কাজ না হলে আইনের পথে হাঁটছি।” মাজদিয়ার বিডিও মৃণালকান্তি বাগচী বলেন, “আসলে আমরা লজ্জা দিয়ে মানুষের মনে দাগ কাটতে চেয়েছি। নইলে পরে আইনের পথ তো খোলাই আছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy