আহা রে আনাজ।
আনাজের চড়া দাম পুজোর মধ্যে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। পুজো মানেই ভাল খাওয়া দাওয়া। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন। মণ্ডপে ভোগ। উৎসবের জের চলবে অন্তত কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত।
ইতিমধ্যে অনেকে খাবারের তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছেন। বাড়িতে পুজো হলে তো কথাই নেই। প্রতিদিন বিভিন্ন পদের রান্না চাই। সেই কারণে আনাজের চাহিদাও কয়েক গুণ বাড়বে অনেক বাড়িতে। উৎপাদন তো আর বাড়বে না। ফলে আরও বেশি দামে কপি, মুলো, কুমড়ো, পটল কিনতে হতে পারে। আজ, রবিবারের বাজারেই তার আঁচ ভাল রকম টের পাওয়ার আশঙ্কা।
করিমপুরের আনাজ ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডল জানান, অক্টোবরের এই সময়ে সাধারণত যে দামে আনাজ বিক্রি হয় এখন সব আনাজই প্রায় তার দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কারণ এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে নিচু জমিতে এখনও জল জমে আছে। পর্যাপ্ত আনাজ চাষ হয়নি। সামান্য কিছু উঁচু জমিতে চাষ হলেও তার উৎপাদনের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। অন্য বছর এই সময়ে বাজারে ফুলকপির আমদানি অনেক বেশি থাকে। অথচ এ বারে অনেক জমিতে ফুলকপির চারা লাগানোর পরে বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের ফের নতুন করে চারা লাগাতে হয়েছে। সেই কপি বাজারে আসতে আরও দেরি হবে। লাল শাক বা পালং শাকেরও একই দশা। ফলে আগামী ক’দিনে আনাজের আমদানি বাড়ার আশা নেই। বরং চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে দাম বাড়তে পারে।
চাষিদের অনেকেই জানাচ্ছেন, অক্টোবর মাসে পটল, ঝিঙে, কচু, ওল ঢ্যাঁড়শের মত বহু আনাজের উৎপাদন কমে যায়। ফলে যে সামান্য পরিমাণ বাজারে মেলে তার দাম অনেক বেশি থাকে। ক’দিনের মধ্যে এই সব আনাজ যেমন বাজারে আরও কমে যাবে, তার পরিবর্তে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, শিমের মত শীতের আনাজের বাজারে ঢোকার কথা। কিন্তু সে সব আনাজ বেশি পরিমাণে আসতে এখনও মাসখানেক লাগতে পারে।
করিমপুরের এক পুজো কমিটির কর্তা বলছেন, পুজোর ক’টা দিন বহু জায়গায় ভোগ হয়। আবার অনেকের বাড়িতে নিরামিষ রান্না হয়। সে ক্ষেত্রে আনাজের প্রয়োজন বাড়ে। এ ছাড়াও বিজয়া দশমী আর লক্ষ্মীপুজোর নাড়ুর জন্য নারকেল লাগবে। নারকেলের দামও কিন্তু এর মধ্যে এক লাফে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা হয়ে গিয়েছে। পুজো মেটার আগে পর্যন্ত এই দাম কমার কোনও আশা নেই।
চাকদহের সিংহের হাটের মালিক পক্ষের রাখি সাহা সিংহ বলেন, “পুজোর সময়ে আনাজের দাম কমার কোনও সম্ভাবনাই দেখছি না। আগে যে আনাজ লাগানো হয়েছিল তা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আনাজ লাগানো শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই আনাজ উঠতে সময় লাগবে। এর পরে আবার বৃষ্টি-বাদলা হলে তো আর রক্ষাই নেই।”
চাকদহের যশড়ার বাসিন্দা রঘুনাথ মণ্ডল বলছেন, “আনাজের উৎপাদন অনেকটাই আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে। এখনও ঠান্ডা পড়েনি। তাই অনেকেই শীতের আনাজ লাগাতে সাহস পাচ্ছেন না। বাজারে যা দেখা যাচ্ছে, সে সব আগের লাগানো। যে কারণে পুজোর সময়ে আনাজের দাম কমার তেমন কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।” যদিও জেলা উপ-কৃষি আধিকারিক রঞ্জন রায়চৌধুরীর আশা, “এখন ভাল আবহাওয়ায় আনাজের উৎপাদন বাড়বে। এভাবে চললে পুজোর সময়ে বাজারে আনাজের দামে খুব একটা হেরফের হবে না।”
নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy