Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Dhoti

ধুতি পরেই ক্রিজে পুরোহিতেরা

বিপক্ষের অধিনায়ক চোখ পাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘দেখ, ক’টা ওভার টিকতে পারিস।’’ বলে, ধুতিতে মালকোঁচা মেরে বল হাতে ছুটে গেলেন ক্রিজের দিকে।

ধুতি সামলে চলল ব্যাট। নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

ধুতি সামলে চলল ব্যাট। নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:১৭
Share: Save:

জেতার জন্য চাই মাত্র ছেষট্টি রান! তুড়ি মেরে তুলে ফেলবেন এমন ভাব করে পরনের ধুতি কষে এঁটে মাঠে নেমে পড়লেন দুই ব্যাটসম্যান! চারদিকে ছড়িয়ে ফিল্ডিং সাজানোর ফাঁকে বল হাতে বিপক্ষের অধিনায়ক চোখ পাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘দেখ, ক’টা ওভার টিকতে পারিস।’’ বলে, ধুতিতে মালকোঁচা মেরে বল হাতে ছুটে গেলেন ক্রিজের দিকে। প্রথম বলটা ঠিকই ছিল, পরের বল আরও জোরে করতে গিয়ে হারালেন লেংথ। সঙ্গে-সঙ্গে মাথার উপর দিয়ে তুলে চার। দু’একটা উইকেট পড়লেও ছেষট্টি রান তুলতে বেগ পেতে হয়নি।

বুধবার নবদ্বীপে কর্মমন্দিরের মাঠে যাঁরা ব্যাট-বল হাতে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে বেড়ালেন, তাঁদের বছরভর অন্য ভাবে দেখতেই অভ্যস্ত শহরসবাসী। দুর্গা বা কালীপুজোর মণ্ডপ কিংবা বিয়ে-পৈতের আসর ওঁদের ছাড়া ভাবাই যায় না। সেই পুরোহিতমশাইয়েরা মেতে উঠেছিলেন নবদ্বীপ সারস্বত সভার আয়োজনে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। তাতে যেমন ছিলেন নবদ্বীপের আটষট্টি বছরের করুণাশঙ্কর রায়, পুটশুরির সাতষট্টি বছরের ধীরেন চক্রবর্তী বা কৃষ্ণনগরের বছর বাষট্টির জয়দেব গোস্বামীরা, তেমন ছিলেন রানাঘাটের বছর একুশের জ্যোতির্ময় রায় বা নবদ্বীপের আঠারো বছরের স্বয়ম্ভু ভট্টাচার্য। নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে পৌরহিত্যের সঙ্গে যুক্ত জনা পঁয়তাল্লিশ মানুষ হাজির।

মন্ত্র, অঞ্জলি, ফুল-বেলপাতা, হোম সচ্ছন্দ পুরোহিতদের নিয়ে ক্রিকেটের আয়োজন কেন? নবদ্বীপ সারস্বত সভার তরফে সুশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, “পুরোহিত বলে কি ক্রিকেটে আগ্রহ থাকবে না?” বুধবার ক্রিকেটের সঙ্গে হল জমজমাট পিকনিক। খেলার আগে হাতে-হাতে কড়াইশুঁটি দিয়ে তেল-মাখানো মুড়ির বাটি, সঙ্গে গরমাগরম বেগুনি আর চা। মাঠ থেকে খানিক দূরে উনুনে কাঠের জ্বালে ততক্ষণে বসে গিয়েছে ‘কিশোরী অন্ন’ অর্থাৎ গোবিন্দভোগ চালের সঙ্গে সোনামুগের ডালের খিচুড়ি। খেলার শেষে গঙ্গার ধারে বসে দারুণ ভোজ।

এ দিনের খেলুড়েদের অনেকেই নবদ্বীপ বঙ্গবিবুধ জননী সভা পরিচালিত ‘পুরোহিত রত্ন’ উপাধির ছাত্রও বটে। মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হুগলির নানা প্রান্ত থেকে এসেছিলেন ওঁরা। কেউ পেশাদার পুরোহিত, কেউ আবার চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শখে পৌরহিত্য পড়তে এসেছেন। কৃষ্ণনগরের জয়দেব গোস্বামী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মৃত্যুঞ্জয় অধিকারী ছিলেন ফিজিয়োথেরাপিস্ট। তিনি সেই কাজ ছেড়ে পৌরহিত্যে ঝুঁকেছেন। চাকদহের শেখর চক্রবর্তী একই সঙ্গে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা করেন এবং পৌরহিত্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

ফুল-বেলপাতাকে আবুলিশ দিয়ে একটু নয় ব্যাটই ধরলেন ওঁরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhoti Priests Cricket Nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE