ফাইল চিত্র
নদিয়ার বোলানের মেজাজটা একেবারেই ভিন্ন স্বাদের। অলস চৈতিদুপুরে চূর্ণীপাড়ে গেলেই কানে আসবে বাংলা ঢোলের আওয়াজ। কৃষ্ণগঞ্জ, পাবাখালি বা কৃষ্ণপুরের কোনও গৃহস্থের উঠোনে বসেছে বোলানের আসর। শুরুতে এই সব আসরে গাওয়া হতো পুরাণ, মঙ্গলকাব্য, রামায়ন, মহাভারত কিংবা রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক কাহিনি। গ্রামীণ বিনোদনে সে কালে বোলানের তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল।
উপস্থাপনার ধরন আলাদা হলেও মুর্শিদাবাদের বোলানও প্রাচীন কালে ছিল পৌরাণিক কাহিনি নির্ভর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমূল বদলে গিয়েছে বিষয়বস্তু। পুরানের পালার সঙ্গে সমকালীন নানা বিষয়কে টেনে এনে নতুন পালা তৈরি হচ্ছে। পালাকারদের দাবি, সামাজিক পালা দর্শকদের বেশি মাতাচ্ছে। দূরদর্শনের চেনা মেগা সিরিয়াল বা জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের অনুকরণে বোলান পালার চাহিদা তুঙ্গে। চলতি বছরে চিৎপুরের ‘হিট’ যাত্রাপালার কাহিনিও বোলানে স্থান পাচ্ছে। কখনও আবার পালাকারেরা সিরিয়ালের জনপ্রিয় চরিত্রের নাম জুড়ে দিচ্ছেন। এতে দর্শকেরা আরও খুশি হচ্ছে।
নদিয়ার বোলান গানে আবার কাহিনীর তুলনায় কথা বেশি। বিশেষ করে সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহকে নিয়ে গান বাঁধার প্রবণতা এখানে বেশি। শ্রোতারাও সেই গানের অপেক্ষায় থাকেন সারা বছর। বিনোদনের বোলান নদিয়ায় হয়েছে উঠেছে প্রতিবাদের গান, জাগরণের গান। প্রতিদিনের গ্রামজীবনের অভাব, অভিযোগ, আবিচারের কথা থেকে শুরু করে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পর্ব সবই উঠে এসেছে নির্ভীক বোলান গায়কের গলায়। কাউকেই সে গান রেয়াত করে না।
যেমন, ২০১১ সালের চৈত্রে বোলানে ছিল পরিবর্তনের বোল। সে বার লেখা হয়েছিল—‘ভোট, ভোট, ভোট এল বঙ্গে/ওগো পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে এল সঙ্গে/ বঙ্গবাসীর মুখে মুখে একটিই কথা তাই/ খুনি বাম সরকারের আমরা পরিবর্তন চাই।’
রাজ্যে পালাবদলের ঠিক আগে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল এই গান। আবার ২০১৩-র চৈত্রে বদলে গিয়েছিল গানের মেজাজ। সে বার বোলান শিল্পীরা গেয়েছিলেন, ‘ওগো রাজনীতিতে দাদাগিরি সব আমলেই ছিল/ এই আমলেও দাদাগিরি যে কমবেশি হল। তাই তো বলি বঙ্গবাসী শুনুন দিয়া মন/এই সব দাদারাই বাংলায় অশান্তির কারণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy