Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

এইচআইভি তো কী, হোক পিকনিক

সিঙ্কু এইচআইভি পজ়িটিভ। তার স্বামী এবং এক সন্তানও তা-ই। চিকিৎসা শুরুর সময় থেকেই গোটা পরিবার লড়াই চালিয়ে আসছে সামাজিক জড়তা আর উপেক্ষার সঙ্গে।

জমে উঠল পিকনিক। নিজস্ব চিত্র

জমে উঠল পিকনিক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১২
Share: Save:

ঘাসের উপরে পাতা চটে সার দিয়ে বসে জনা পঞ্চাশেক মহিলা ও পুরুষ। কারও পাতে চাটনি, কারও রসগোল্লা। খেতে খেতে চোখে জল এসে গিয়েছিল বছর পঁয়ত্রিশের সিঙ্কু দাসের। সে জল আনন্দের, সে জল বুকে জমে থাকা অভিমানের।

সিঙ্কু এইচআইভি পজ়িটিভ। তার স্বামী এবং এক সন্তানও তা-ই। চিকিৎসা শুরুর সময় থেকেই গোটা পরিবার লড়াই চালিয়ে আসছে সামাজিক জড়তা আর উপেক্ষার সঙ্গে। চোখের কোণ থেকে জল মুছতে মুছতে সিঙ্কু বলেন, “কত দিন পরে আজ এ ভাবে সকলের সঙ্গে মিশতে পারছি। একানে কেউ আমাদের দিকে ঘৃণা বা উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখছে না। আমাদের ছোঁয়া বাঁচাতে চাইছে না।”

শুধু তিনি কেন, রবিবার প্রায় একই অনুভূতি হল ১২০ জন এইচআইভি পজ়িটিভ মানুষের। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও রয়েছে। তারা সকাল থেকে হেসে-খেলে মিঠেকড়া রোদে পিঠ মেলে উপভোগ করল পিকনিক। তাদের সঙ্গ দিলেন এমন পঞ্চাশ জন মানুষ, যাঁরা কেউই এইচআইভি পজ়িটিভ নন। তারা সুস্থ, আর পাঁচটা মানুষের মতোই। তাঁরাই মাতিয়ে রাখলেন রোগ আর সমাজের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে লড়াই করে চলা মানুষগুলোকে। খেললেন, গল্প করলেন, পাশাপাশি বসে খেলেন।

এঁদের অন্যতম রানাঘাটের অপর্ণা বিশ্বাসে বলছেন, “এইচআইভি সম্পর্কে যা ভাবা হয় তা আসলে কুসংস্কারের পর্যায়ে। কোনও কিছু না জেনেই মানুষ এঁদের এড়িয়ে চলেন। ভাবেন বুঝি ছোঁয়াচে রোগ।” কৃষ্ণনগরের সুলেখা পাল বলেন, “আমরা সেই ভুল ভাঙতে চাই। তাই আজ ওঁদের সঙ্গে ওঁদের মতো করে পিকনিক করলাম। যাতে অন্যেরা দেখে জড়তা ভাঙতে পারে।”

পিকনিকের যাবতীয় আয়োজন করেছিলেন দুই বন্ধু, রানাঘাটের মৃন্ময় বিশ্বাস ও কৃষ্ণনগরের মানিক দে। এক অসরকারি সংস্থার সহযোগিতায়। জেলা বিভিন্ন প্রান্তের এইচআইভি পজ়িটিভ রোগীদের তাঁরা হাজির করেছিলেন এই পিকনিকে। সংস্থার সভাপতি সঞ্জীব দে বলছেন, “কোনও লুকোছাপা নয়, নিজেকে আড়াল করে রাখা নয়। আমরা চাই, এইচআইভি পজ়িটিভ মানুষেরা বেরিয়ে আসুন আড়াল থেকে। নিজেদের অধিকার বুঝে নিন। ফিরে আসুন সমাজের মূলস্রোতে। এটাই আমাদের লড়াই।”

পিকনিক প্রায় শেষ। সবাইকে খাইয়ে পড়ন্ত বেলায় মাংসে কামড় দিয়ে দুই বন্ধু একগাল তৃপ্তির হাসি হাসছেন। বছরখানেক আগে মানিক নিজের বিবাহবার্ষিকীতেও শ’খানেক এইচআইভি পজ়িটিভ রোগীদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। তিনি বলছেন, “আমরা চাই, সমাজের জড়তা ভাঙুক। যত এঁদের মূলস্রোতে আনতে পারব, ততই সেটা সম্ভব হবে।”

(এইচআইভি পজ়িটিভ মানুষদের নাম পরিবর্তিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

AIDS HIV Picnic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE