যে টেলিফোন আসার কথা ছিল নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সেই টেলিফোন আর আসে না।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে খারাপ হয়ে পড়ে আছে নবদ্বীপ হাসপাতালের বিএসএনএলের সব কটি ল্যান্ডলাইন ফোন। সেই যে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে চুপ করেছে নবদ্বীপ হাসপাতালের টেলিফোন, আজও নির্বাক। নবদ্বীপ টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বার বার জানিয়েও সচল করা যায়নি হাসপাতালের মতো জরুরী পরিষেবার টেলিফোন। কি জরুরীবিভাগ, কি হাসপাতাল সুপারের ঘরের টেলিফোন সবই এখন টেবিলের শোভা বাড়ানো ছাড়া আর কোন কাজেই আসছে না। গত পাঁচ মাস ধরে কোন টেলিফোন নম্বর কাজ না করায় চরম হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন মানুষ।
টেলিফোন করে কোন খবরাখবর নেওয়ার সুযোগ নেই। যে কোন প্রয়োজনে সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে যোগাযোগ করতে হচ্ছে। রোগী ভর্তি থাকলে পরিবারের লোকজনের সমস্যা আরও বাড়ছে। অন্যদিকে হাসপাতাল সংক্রান্ত যে কোন কাজে সুপার থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার থেকে নার্স সকলেরই ভরসা ব্যক্তিগত মোবাইল।
নবদ্বীপ এবং বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র বড় হাসপাতাল নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। বর্ধমানের কালনা থেকে কাটোয়া এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে কল্যাণীর মধ্যবর্তী বিরাট এক অঞ্চলের কয়েক লক্ষ মানুষ প্রাথমিক ভাবে তাঁদের যাবতীয় রোগের জন্য ভরসা করেন এই হাসপাতালের ওপর। নবদ্বীপ হাসপাতাল যাঁরা চিকিৎসার প্রয়োজনে যারা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে নবদ্বীপ হাসপাতালে আসা যাওয়া করেন এই নতুন সমস্যায় তাঁদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
হাসপাতালের সুপার বাপ্পাদিত্য ঢালি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানানো হয়। মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন এবং সর্বশেষ চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেও টেলিফোন দপ্তরে এই বিষয়ে বারে বারে লিখিত ভাবে জানানো সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি।
শুধু টেলিফোনই নয়, হাসপাতালের বিএসএনএলের ইন্টারনেট পরিষেবাও বিপর্যস্ত। গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ইন্টারনেট নির্ভর। যার ফলে একটা সময়ে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে ছিল নবদ্বীপ হাসপাতাল। দৈনন্দিন রিপোর্ট থেকে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার মতো নিম্নবিত্ত মানুষের নিখরচায় চিকিৎসার সুবিধা কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না। বাপ্পাদিত্যবাবু বলেন, “বেশ কিছুদিন টেলিফোন দপ্তরের দৌড়াদৌড়ি করে যখন বুঝতে পারলাম কাজের কাজ কিছুই হবে না, তখন বাধ্য হয়ে আমরা অন্য মোডেম ব্যবহার করতে শুরু করেছি।’’
কিন্তু কেন এমন অবস্থা? উত্তরে টেলিফোনের নবদ্বীপ এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার স্বপন কুমার সরকার বলেন, “নবদ্বীপ শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাটির তলায় বিদ্যুতের কেবল পাতার কাজ চলছে। এই কাজের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে ভূগর্ভস্থ টেলিফোনের কেবল যথেচ্ছ ভাবে ছিঁড়ছে। যে কারণে টেলিফোনের সাধারন গ্রাহক থেকে জরুরী পরিষেবা সবই বিপর্যস্ত হচ্ছে। যতদিন না মাটি খোঁড়ার কাজ শেষ হবে ততদিন হাজার চেষ্টা করেও শহরের টেলিফোন পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব।”
টেলিফোন দপ্তরের পাল্টা অভিযোগ কবে কোথায় রাস্তা কাটা হবে এ নিয়ে বিদ্যুৎ দপ্তর টেলিফোনের সঙ্গে কোন আলোচনাই করে না। যার ফলে টেলিফোনের ভূগর্ভস্থ কেবল থেকে ইন্টারনেটের অপটিক্যাল ফাইবার সব কেটে সাফ হয়ে যাচ্ছে। ভুগছেন গ্রাহকেরা। এই মুহূর্তে নবদ্বীপে বিএসএনএলের হাজার খানেক ল্যান্ডলাইনের মধ্যে চারশোর বেশি অকেজো হয়ে আছে। টেলিফোনের যে সব কর্মীরা লাইনে কাজ করেন তাঁদের কথায়, ‘‘রাস্তা কাটার কাজে সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। একই রাস্তা একাধিক বার খোঁড়া হচ্ছে।’’
এই প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ দফতরের নবদ্বীপের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সৌম্যদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিদ্যুতের জন্য ভূগর্ভস্থ কেবল পাতার মূল কাজ আমাদের শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন সামান্য কিছু ছোটখাট কাজ চলেছে। তবে তাঁর সঙ্গে মাটির নিচের টলিফোন লাইনের কোন সম্পর্ক নেই।” টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার স্বপনকুমার সরকার জানিয়েছেন, “নবদ্বীপের ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের টেলিফোন খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy