Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কখন যে জ্বলে উঠবে খেলনা, কে-ই বা জানে

দু’দিকে দোকানের সার। মাঝখানে এক ফালি ঢালাই রাস্তা। দোকানের সামনে জিনিস ডাঁই করে রাখায় রাস্তা আরও সরু হয়েছে। দোকানে ভর্তি প্লাস্টিকের বল আর খেলনা। শিশুদের মনোরঞ্জনের নানা জিনিস। সব প্লাস্টিক বা রাবারের। এক বার আগুন লাগলে নেভানোর উপায় নেই। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা।

চলাফেরার জায়গাটুকুও নেই বহু আনাচে-কানাচে। নিজস্ব চিত্র

চলাফেরার জায়গাটুকুও নেই বহু আনাচে-কানাচে। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

দু’দিকে দোকানের সার। মাঝখানে এক ফালি ঢালাই রাস্তা। দোকানের সামনে জিনিস ডাঁই করে রাখায় রাস্তা আরও সরু হয়েছে। দোকানে ভর্তি প্লাস্টিকের বল আর খেলনা। শিশুদের মনোরঞ্জনের নানা জিনিস। সব প্লাস্টিক বা রাবারের। এক বার আগুন লাগলে নেভানোর উপায় নেই। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা।

নাম খেলনা বাজার। রানাঘাট শহরের অত্যন্ত ব্যস্ত আর ঘিঞ্জি এই বাজার কমপক্ষে ১২০টি দোকান রয়েছে। নদিয়া ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে খেলনা কিনতে আসেন। কিন্তু আগুন লাগলে কী হবে, কেউ জানে না। রাস্তায় মাল রাখা তো আছেই। মাঝে-মধ্যে দোকানের সামনে ভ্যান দাঁড় করিয়ে মাল নামানোও চলতে থাকে। এতে রাস্তা আরও সরু হয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি চলাচল করা তো দূরের কথা। ইতিমধ্যে দু’বার এখানে আগুন লেগেছিল। এখানকার একটি খেলার দোকানে এবং একটি ইলেকট্রিকের দোকানের বারান্দায় আগুন লাগে। আগুনের মাত্রা কম থাকায় দমকল কর্মীরা অনেক কষ্টে সেই আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

রানাঘাট ট্রেডার্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চিন্ময় চক্রবর্তীও বলছেন, “এই বাজারে প্লাস্টিকের খেলনা বা ইলেকট্রিক সামগ্রীর দোকানই বেশি। আগুন লাগলে বিপদের সীমা থাকবে না। সেই কারণে দোকান মালিকদের সব সময়ে সচেতন থাকার কথা বলা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে সভা করে সতর্কও করা হয়েছে।’’

খেলনা বাজারের পাশেই রয়েছে রেল বাজার। এখানে দেড়শোরও বেশি দোকান রয়েছে। পুরনো এই বাজারের বিভিন্ন রাস্তার পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। অধিকাংশই ভীষণ সরু। সেখান দিয়ে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতেই পারবে না। আশপাশে কোনও পুকুরও নেই যে আগুন লাগলে সেখান থেকে জল নিয়ে আসা যাবে।

রানাঘাট রেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পিন্টু সরকার বলেন, “এটা কোন পরিকল্পিত বাজার না হওয়াতেই এই সমস্যা। কয়েকটি জায়গায় ঝুঁকি রয়ে গিয়েছে সত্যিই। ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হয়েছে। স্থায়ী পাকা বাজার তৈরি করে দেওয়ার জন্য পুরসভার কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সেটা হয়ে গেলে সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।”

রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এখানকার বাজার নিয়ে সমস্যা আছে। বিশেষ করে রেল বাজার। সেটা নতুন করে তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সব সময়ে সচেতন করা হয়— তাঁরা যাতে এমন কিছু না করেন, যাতে আগুন লেগে যেতে পারে। তা হলে সবাইকেই বিপদে পড়তে হবে।”

দমকলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রানাঘাট বাজারে ঢোকার রাস্তা নেই। আগুন লাগলে খুব কিছু করার থাকবে না। এলাকায় কোনও জলের উৎস না থাকায় জল পাওয়াটাও বিরাট সমস্যা। তার উপরে আচে যানজট। শহরের রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দুষ্কর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই আগুন এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে যে তা নেভানো কার্যত অসম্ভব।

অর্থাৎ, স্রেফ ভাগ্যের ভরসাতেই দিন কাটছে। কলকাতার নন্দরাম বা বাগড়ি মার্কেটের দশা খেলনা বাজারেরও না হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Market Fire Fire Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE