ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
নীল-সাদা সরকারি বোর্ডের পরিচিতি বলছে— ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’, তবে ডোমকলের হাসপাতাল যে নিতান্তই খুঁড়িয়ে চলা একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তা নিয়ে অবশ্য তেমন সংশয় নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। ওষুধের অপ্রতুলতা, বড় ধরনের কোনও অস্ত্রোপচারের প্রশ্ন উঠলেই বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা, এ রোগ ছিলই। এ বার প্রশ্ন উঠল চিকিৎসক সংখ্যা নিয়ে।
আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অন্য এক চিকিৎসক উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। হাসপাতাল-ত্যাগী চিকিৎসকদের সেই তালিকায় এ বার নাম উঠতে চলেছে আরও অন্তত পাঁচ জনের। বন্ডে থাকা ওই চিকিৎসকদের মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার। তাঁরা যদি ফের সরকারি হাসপাতালে ফিরতে না চান? আপাতত তার কোনও স্পষ্ট উত্তর ডোমকল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।
অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক রাজীব সরকার ও রেডিয়োলোজিস্ট কৌশিক দে হাসপাতাল ছেড়েছেন মাস কয়েক আগেই। কিছু দিন আগে, উচ্চশিক্ষার জন্য হাসপাতাল ছেড়েছেন ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক শঙ্খশুভ্র ঘোষ। এ দিন, মেয়াদ শেষ হল আরও পাঁচ চিকিৎসকের।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চার জন নতুন চিকিৎসকের ডোমকলে বদলি হয়ে আসার কথা, কিন্তু তাঁরা কবে যোগ দেবেন, আদৌ যোগ দেবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। ফলে, হাসপাতালে আসা রোগীর ভিড়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে অনিশ্চয়তার কথা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ মূহূর্তে হাসপাতালে নতুন চিকিৎসক কবে যোগ দেবেন তা জানেন না তাঁরা। কেবল চিকিৎসক নয়, ফার্মাসিস্টের সংখ্যাও দুইয়ে নেমে আসায় আরএসবিওয়াই প্রকল্পে রোগীকে ওষুধ দেওয়াও প্রায় বন্ধের মুখে। ওই হাসপাতালের সুপার ও ডোমকলের এসিএমওএইচ প্রবীর মাণ্ডি বলেন, ‘‘আমরা চিকিৎসক নিয়ে সত্যিই সঙ্কটের মধ্যে আছি। তবে যাঁরা আছেন, তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে অবস্থা সামাল না দিলে আরও খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়তাম।
পাশাপাশি, চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডোমকল নামের সঙ্গে জুড়ে আছে আতঙ্ক। ফলে এখানে পোস্টিং হলেই ‘পালাই পালাই’ করতে থাকেন চিকিৎসকেরা। এক চিকিৎসক এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘নতুন চিকিৎসকদের ডোমকলে পোস্টিং হলেই তাঁরা বলতে থাকেন, ‘ওখানে তো খুনোখুনি ছাড়া আর কিছু হয় না, সেলাই ছাড়া কিছুই করার থাকবে না!’’
মেয়াদ ফুরানোর আগেই তাই অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে যান। এমন নজিরও অঢেল রয়েছে। এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘আমার যখন ডোমকল পোস্টিং হয়েছিল, আমার মা খুব কান্নাকাটি করেছিলেন, আমাকে আসতে বারণও করেিছলেন। এখনও ডোমকলের নামের সঙ্গে আতঙ্কটা জড়িয়ে আছে।’’
সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে যেখানে থাকার কথা কম করে জনা ষাটেক চিকিৎসকের, সেখানে রয়েছেন সাকুল্যে ত্রিশ জন। ডোমকল হাসপাতালে অনেক বিভাগে বিশেষজ্ঞ নেই। অর্থোপেডিক ও ইএনটি বিভাগে কোনও চিকিৎসক না থাকায় প্রতি দিন ঘুরছেন অসহায় রোগী। রেডিয়োলজি বিভাগ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
শল্য চিকিৎসকদের অনেকেই নিজের ডিউটির পরেও রাত পর্যন্ত থেকে যান হাসপাতালে। এমনই দুই চিকিৎসক বছর কয়েক ধরে ডোমকল হাসপাতালে ভরসা হয়ে উঠেছিলেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা এসেই খোঁজ করতেন ওই দুই চিকিৎসক হাসপাতালে আছেন কি না। কিন্তু মাস কয়েক হল, তাঁরাও হাসপাতাল ছেড়ে চলে গিয়েছেন ।
কুপিলা গ্রামের সাহেব বিশ্বাস ব্যঙ্গ করে বলছেন, ‘‘ওটা একটা নীল সাদা বাড়ি, হাসপাতাল আর নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy