প্রতীকী ছবি।
একের পর এক চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন যখন প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নামছে, অবরোধ-বিক্ষোভ করছে, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসেসিয়েশনের কিছু কর্তা তখনও ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন— ‘‘প্রশাসনের উপরে আস্থা রাখছি।’’
এ দেশে চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসেসিয়েশন’ বা আইএমএ। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় তাদের ভূমিকাকে ‘সরকার তোষণ’ আখ্যা দিয়ে কার্যত ফুঁসছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, পাছে রাস্তায় নেমে সক্রিয় প্রতিবাদ করলে প্রশাসন-বিরোধীর তকমা গায়ে লাগে বা শাসকদলের বিরাগভাজন হতে হয়, তাই আইএমএ নেতৃত্ব এমন গুটিয়ে রয়েছেন এবং শুধু মৌখিক ‘নিন্দা-বার্তা’ দিয়ে দায় সারছেন।
চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালের ঘটনার কথাই ধরা যাক। এক মৃত যুবককে ‘মৃত’ বলার ‘অপরাধে’ গত ১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবব্রত ভট্টাচার্যের উপরে চড়াও হয় কয়েক জন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হামলাকারীদের ছবি থাকা সত্ত্বেও দোষীরা ধরা পড়ছিল না। ক্ষুব্ধ চিকিৎসকেরা অভিযোগ তুলেছিলেন, শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের কয়েক জন ঘটনায় জড়িত বলেই পুলিশ দেরি করছে। প্রত্যাশিত ভাবেই শাসক দল এবং পুলিশের তরফে ওই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পাশে দাঁড়িয়ে অপরাধীদের ধরার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টির বদলে আইএমএ-র জেলা নেতৃত্ব প্রশাসনের উপর আস্থার বার্তাই দিয়েছিলেন। কেন তাঁরা চিকিৎসক নিগ্রহের বিরুদ্ধে অন্য চিকিৎসক সংগঠনগুলির মতো পথে নামছেন না? প্রশ্ন শুনেই কার্যত ঝাঁঝিয়ে উঠে আইএমএ-র কৃষ্ণনগর শাখার সভাপতি রমেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য নেতৃত্ব পথে নামার কোনও নির্দেশ দেননি। আলোচনা করে কর্তব্য ঠিক করব। প্রশাসনকে সময় দিতে চাই।’’ ঠিক কতটা সময় দিতে চান? রমেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘সে হিসেব আপনাকে দেব না।’’ আইএমএ-র রাজ্য সভাপতি শান্তনু সেনও বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। ওদের উপরে আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে।’’
ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের অনেকেরই প্রশ্ন: ‘‘পুলিশ যদি অনন্তকাল কাউকে ধরতে না-পারে তা হলে আইএমএ কি অনন্তকাল আস্থা দেখিয়ে বসে থাকবে?’’ এ প্রসঙ্গে শান্তনু সেনের মন্তব্য, ‘নো কমেন্টস!’
রাজ্যের অন্য একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগ, আইএমএ-র মতো বৃহৎ সংগঠন ডাক্তারদের পক্ষে নিরপেক্ষ ভাবে লড়াই চালালে অন্য সংগঠনের প্রয়োজনই হয় না। কিন্তু আইএমএ সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তাই অন্যদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে হয়। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর তরফে রেজাউল করিমের কটাক্ষ, ‘‘আইএমএ তো নাম-কা-ওয়াস্তে কাগজে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দায়িত্ব সারে। ওদের মাথায় সব সক্রিয় রাজনীতি করনেওয়ালা শাসকদলের নেতা। তাঁরা পথে নেমে প্রতিবাদ করে সরকারের বিরাগভাজন হতে চান না।’’ শান্তনু সেন অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমরা কী করেছি তা ফেসবুকেই দেখতে পাবেন।’ রেজাউল করিমের পাল্টা, ‘‘ওই ফেসবুক-সর্বস্ব আস্ফালনই সার। যারা চিকিৎসক নিগ্রহে অভিযুক্তদের সব জেনেও গ্রেফতার করে না সেই প্রশাসনে নাকি আইএমএ আস্থা রাখে! আমরা রাখি না, তাই পথে নামি।’’
আর এক চিকিৎসক সংগঠন ‘ডক্টর্স ফর পেশেন্ট’-এর তরফে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকদের উপরে হামলা আটকাতে আইএমএ-এর ভূমিকা যৎসামান্য বা নামে মাত্র। ওদের নানা কারণে প্রশাসনের উপর আস্থা থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের নেই। তাই আমরা পথে নেমেছি, ওরা নয়।’’
ভাগ্য ভাল, ঘটনার তিন দিন পর পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। নইলে আস্থা রাখা আরও দায় হতো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy