Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দেবভোগ্য কেক তৈরির ধুম মন্দিরে

বড়দিনের মরসুমে নদিয়ার মঠ-মন্দিরে দেবতাদের ভোগে কেকের উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে উঠছে। মায়াপুরে ইস্কন মন্দির হোক বা নবদ্বীপ কোলের ডাঙ্গায় সারস্বত গৌড়ীয় মঠ অথবা কেশবজী গৌড়ীয় মঠের মতো বিদেশি ভক্ত-প্রধান মন্দির—সর্বত্র ভোগের থালায় দেখা মিলছে কেকের।

ইস্কনে তৈরি হচ্ছে কেক। নিজস্ব চিত্র

ইস্কনে তৈরি হচ্ছে কেক। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

জিরেন কাটের খেজুর রস কাঠের জ্বালে দিয়ে তৈরি করা নলেন গুড়ের সঙ্গে খাঁটি দুধ মিশিয়ে অল্প আঁচে তৈরি করা হয় ক্ষীর। তার সঙ্গে কাজু, কিসমিস, পেস্তা, বাদাম, প্রয়োজনে ছানা, সুজি-র মতো নানা উপকরণ মিশিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ‘ঘুঁটের’ চুল্লিতে সারারাত ‘বেক’ করে তৈরি করা হয় ‘দেবভোগ্য’ কেক। বড়দিন থেকে নিউইয়ারের শীতকালীন উৎসবের মরসুমে মায়াপুর-নবদ্বীপের বিভিন্ন মঠমন্দিরে সেই বিশেষ কেক সকালে বা সন্ধ্যায় ভোগে দেওয়া হয়। গন্ধে, স্বাদে এবং দেখনদারিতে যে কোনও নামী সংস্থার কেকের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিতে পারে এই সব ‘নিরামিষ’ কেক।

বড়দিনের মরসুমে নদিয়ার মঠ-মন্দিরে দেবতাদের ভোগে কেকের উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে উঠছে। মায়াপুরে ইস্কন মন্দির হোক বা নবদ্বীপ কোলের ডাঙ্গায় সারস্বত গৌড়ীয় মঠ অথবা কেশবজী গৌড়ীয় মঠের মতো বিদেশি ভক্ত-প্রধান মন্দির—সর্বত্র ভোগের থালায় দেখা মিলছে কেকের। এমনকি নবদ্বীপের প্রাচীন মঠমন্দির গুলোতেও ভোগের থালায় সাজানো থাকছে কেক। ভক্তদের চাহিদা বুঝে নবদ্বীপের ছোটবড় সব মিষ্টির দোকানেই ডিসেম্বরের সাজানো থাকছে ছানার বা ক্ষীরের নানা রকমের কেক। মন্দিরের কেকের স্বাদ অবশ্য এদের থেকে অনেক আলাদা এবং তা শুধু মন্দির চত্বরেই মেলে।

ইস্কন মন্দিরের জন-সংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “আমাদের এখানে সারা বছরই ভোগে কেক দেওয়া হয়। তবে ডিসেম্বরের বড়দিন ও নতুন বছরের সময়ে কেকের পরিমাণ ও বৈচিত্র বাড়ে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ ইস্কনের নিজস্ব বেকারিতে ভক্তরাই সে সব কেক তৈরি করেন। আমাদের বিদেশি ভক্তদের অনেকেই কেক তৈরিতে খুব দক্ষ। বানানা কেক, মিক্সড ফ্রুট কেক, স্ট্রবেরি কেকের পাশাপাশি চকোলেট কেক বড়দিনের সময়ে বেশি করে তৈরি করা হয়। দর্শনার্থীদের কাছে কেক প্রসাদ হিসেবে খুব জনপ্রিয়। কারণ, মন্দিরের বাইরে কোথাও মিলবে না এই কেক।” কুড়ি টাকা থেকে শুরু ইস্কনের কেক। আবার পাঁচশো টাকা পাউন্ডের কেকও মিলবে।

তবে নবদ্বীপের অন্য মঠে-মন্দিরে কেকের প্রচলন খুব বেশি দিনের নয়। প্রাচীন মায়াপুরের জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান গৌড়ীয় বৈষ্ণবসমাজের অদ্বৈত দাসের মতে, “নবদ্বীপের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমে এই সময়ে দু-তিন রকমের কেক তৈরি করা হয়। সাদা ময়দা, সুজি, কাজু, কিসমিস ও নানা রকমের ফল দিয়ে ফ্রুটকেক নিজেরা তৈরি করি।” গানতলার বলদেব মন্দিরের মন্দিরে এক বিশেষ ধরনের ছানার কেক ভোগ দেওয়া হয়। ওই মন্দিরের সেবাইত কিশোর গোস্বামী বলেন,“ ভোগের কেক অবশ্যই ছানার তৈরি হতে হয়। তবে শুধু বড়দিন নয়, ঝুলন পূর্ণিমা বা বলদেবের জন্মতিথিতেও ভোগে কেক দেওয়া হয়। আমাদের মন্দিরের জন্য বাঘনাপাড়া থেকে এক রকম সুস্বাদু ছানার কেক ভক্তেরা করিয়ে আনেন।’’

নবদ্বীপে ছানা ও ক্ষীরের কেকের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণত ৫০, ১০০ ও ২০০ গ্রাম ওজনের ক্ষীরের কেক কুড়ি থেকে পঞ্চাশ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ছানার কেক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। নবদ্বীপের প্রবীণ মিষ্টান্ন কারিগর প্রয়াত শিবু সেন অর্ধ শতক আগে শহরে ছানার কেক তৈরি শুরু করেন। তখন সবে ইস্কন তৈরি হচ্ছে। পরীক্ষামূলক ভাবেই তিনি ছানা দিয়ে কেক তৈরি করেছিলেন। এখন তা রমরমিয়ে বিকোচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cake Pilgrims Devotees ISKCON Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE