Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ভূগোল মুছল ডোমকল-হিঙ্গলগঞ্জ

জানভাই খুঁজে দিলেন প্রকাশকে

গাছপাকা আম দু’টো এগিয়ে দিতেই গোগ্রাসে সাবাড় করে ফেলেছিলেন তিনি। দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল নামছে। সারাদিন সেই মাচাতেই পড়েছিলেন তিনি।

শেষবেলা: জামা পরিয়ে দিচ্ছেন জান মহম্মদ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

শেষবেলা: জামা পরিয়ে দিচ্ছেন জান মহম্মদ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০২:৪০
Share: Save:

গাছপাকা আম দু’টো এগিয়ে দিতেই গোগ্রাসে সাবাড় করে ফেলেছিলেন তিনি। দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল নামছে। সারাদিন সেই মাচাতেই পড়েছিলেন তিনি।

মুখভর্তি দাড়ি, নোংরা পোশাকের মানুষটিকে দেখে কেমন মায়া পড়ে গিয়েছিল জান মহম্মদ আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের। বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে যত্ন করে রাতের খাবার খাইয়ে পাখার নীচে ঘুমোতে দেন। বাড়ির পরিবেশ ফিরে পেয়েই কিনা কে জানে, কাগজ কলম বাড়িয়ে দিতে নাম গ্রামের নাম লিখে দেন তিনি।

সূত্র বলতে সেটাই। সেখান থেকে দিন সাতেকের মধ্যে খোঁজ মেলে তাঁর বাড়ির। রবিবার মুর্শিদাবাদের ডোমকল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে নিজের বাড়িতে ফিরলেন বছরখানেক ধরে নিখোঁজ থাকা প্রকাশ মিস্ত্রি। সজল চোখে তাঁকে বিদায় জানালেন জান মহম্মদ।

দাদাকে ফিরে পেয়ে আত্মহারা প্রকাশবাবুর ভাই পলাশ মিস্ত্রি। তিনি বলছেন, ‘‘এক দাদাকে ফেরাতে এসে আর এক দাদাকে পেলাম। জান দাদা না থাকলে এই দাদাকে পেতাম না।’’

ডোমকলের শীতলনগরের ছা-পোষা চাষি জান মহম্মদ। এলাকার প্রাক্তনও প্রধানও তিনি। কিন্তু গ্রামে সবার কাছে তিনিই ত্রাতা। যে কোনও কাজে ডাক পড়ে তাঁর।

তিনি জানালেন, দিন সাতেক আগে তাঁর বাগানের মাচায় এসে বসেন প্রকাশবাবু। মুখে কোনও কথা নেই। উদাস চাউনি। মুখ ভর্তি দাড়ি, নোংরা পোশাক। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে দেখে গাছ থেকে দুটো পাকা আম পেড়ে তাঁর হাতে দেন। খাওয়ার পরে আবার সেই চুপ করে বসে থাকা। রাত নামতে বাড়িতে ডেকে আনেন। দিন দুয়েক পরে কথা বলেন তিনি। কী খেতে পছন্দ করেন তাও জানান। তার পছন্দ মতোই খাবার তৈরি করে দেন জান মহম্মদের স্ত্রী রহিমা বিবি। এর পরেই নাপিত ডেকে চুল-দাড়ি কাটানো হয়। কেনা হয় নতুন পোশাকও। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে দেখে তার দিকে কাগজ কলম বাড়িয়ে দেন। সেখানে নিজের নাম সঙ্গে লেখেন পুকুরিয়া।

পরের দিন নিজেই বলেন হিঙ্গলগঞ্জ। স্থানীয় থানার মাধ্যমে খোঁজ শুরু হয়। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ যযেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পুকুরিয়ায় খোঁজ নিতেই প্রকাশের বিষয়ে জানতে পার। বাকিটা শুধু বাড়ি ফেরার পালা।

পলাশবাবু জানান, বছর খানেক আগে প্রকাশবাবুর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তার পরে পরেই তাঁর বাবাও মারা যান। হতাশায় ভুগতে থাকা প্রকাশবাবু এক রাতে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান।

রবিবার ভোরেই ডোকমল থানায় পৌঁছে যান পলাশ। সকাল ছ’টা নাগাদ শীতলনগরে জান মহম্মদের বাড়ি। তখন তাঁর উঠোনে তিল মাত্র জায়গা নেই। নতুন লুঙ্গি-জামা-জুতো পরিয়ে প্রকাশবাবুকে নিজে হাতে তৈরি করে দেন। পুলিশের গাড়িতে চড়ে তিনি যখন রওনা হচ্ছেন। তখন জান মহম্মদের চোখে জল। প্রকাশবাবুকে জড়িয়ে ধরে তিনি বললেন, ‘‘বাড়ি চিনে গেলেন। আবার আসবেন কিন্তু।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jan Mohammed Prakash Mistry Friends Returns home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE