Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিয়েতে নারাজ, পড়তে চেয়ে বাড়ি ছেড়ে হোমে ছাত্রী

মা চেয়েছিলেন মেয়ের বিয়ে দিতে। কিন্তু বেঁকে বসে মেয়ে। শেষ পর্যন্ত নিজের বিয়ে নিজে ভেস্তে দিয়ে, মায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাড়ি ছাড়ল দশম শ্রেণির ছাত্রী ইতি মণ্ডল। তার  ঠাঁই হয়েছে হোমে।

ইতি মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

ইতি মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

মা চেয়েছিলেন মেয়ের বিয়ে দিতে। কিন্তু বেঁকে বসে মেয়ে। শেষ পর্যন্ত নিজের বিয়ে নিজে ভেস্তে দিয়ে, মায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাড়ি ছাড়ল দশম শ্রেণির ছাত্রী ইতি মণ্ডল। তার ঠাঁই হয়েছে হোমে।

আগামী ২৮ জানুয়ারি মেয়ের বিয়ের দিন স্থির করেছিলেন ইতির মা অলকা মণ্ডল। শুরু থেকেই বিয়েতে আপত্তি ছিল ইতির। দু’সপ্তাহ আগে নিজের স্কুল জঙ্গিপুর বালিকা বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের আধিকারিক ও শিক্ষিকাদের উপস্থিতিতে তার বিয়ে ঠিক করার কথা জানিয়েছিল ইতি। সেই কথা শুনে শিক্ষিকারা ও চাইল্ড লাইনের কর্তারা বাড়ি গিয়ে তার মা’কে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের কথায় আমল দেননি অলকা। এর মধ্যে গত রবিবার বীরভূমের নলহাটি থেকে পাত্রের পরিবারের লোক বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করতে এলে দুই বাড়ির লোকজনের উপস্থিতিতে ওই কিশোরী জানিয়ে দেয় সে এখনই বিয়ে করবে না। বরং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। পাত্রীর মুখে এ কথা শুনে ফিরে যায় পাত্রের পরিবার।

ইতির অভিযোগ, এরপরই তার ওপর নির্যাতন শুরু করেছিলেন অলকা। ওই রাতেই মারধর করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে জঙ্গিপুরের সাহেববাজারের কয়েক জনের চেষ্টায় ওই ছাত্রী বাড়িতে ফিরতে পারে। পরিবারের কাউকে পাশে না পেয়ে সোমবার বেলা গড়াতেই ইতি সোজা ছুটে যায় স্কুলে। কান্নায় ভেঙে পড়ে শিক্ষিকাদের সে জানায়, তার বাবা ভরত মণ্ডল আট বছর আগে মারা গিয়েছেন। মা, ভাই ও সে একটা ভাড়াবাড়িতে থাকে। তার ভাই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এখন তার মা ফের একজনকে বিয়ে করেছে। তিনি সোনার দোকানে কাজ করেন মুম্বইতে। মা এখন ভাইকে নিয়ে সেখানে চলে যেতে চাইছে। তাই মেয়ের বিয়ে দিয়ে তিনি দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন। শিক্ষিকা অনামিকা টুডু বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার মাকে বোঝানোর বহু চেষ্টা করেছি আমরা। সোমবার স্কুল খুলতেই ইতি আমাদের কাছে এসে সব কথা খুলে জানায়। আমরা বাধ্য হয়ে সমস্ত ঘটনা জানাই ব্লক অফিসে ও পুলিশকে। ওকে তাঁরা ফের তার মায়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।’’

ইতি এদিন বলে, ‘আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে চাই। মাকে বারবার সে কথা বুঝিয়ে বলেছি। কিন্তু মা কোনও কথা শুনতে রাজি নয়। আত্মীয় পরিজনদেরও সাহায্য চেয়ে পাইনি। তাই শেষ পর্যন্ত শিক্ষিকাদের কাছে এসেছি। ওঁরাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।”

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৪ বছর বয়স ওই কিশোরীর। বহু বোঝানো হলেও মায়ের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছে, ওই কিশোরী বাড়িতে নিরাপদে থাকতে পারবে না। সে-ও চাইছিল না মায়ের কাছে থাকতে। কারণ, তার আশঙ্কা ফের তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে। বন্ধ হয়ে যাবে তার পড়াশোনা। সে যাতে নিরাপদে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, সে জন্য চাইল্ডলাইনের মাধ্যমে কিশোরীকে বহরমপুরে শিলায়ন হোমে পাঠানো হয়েছে।” চাইল্ড লাইনের কর্ত্রী কাত্যায়নী স্বর্ণকার জানান, কিশোরীকে শিশু সুরক্ষা কমিটির নির্দেশে মঙ্গলবারই শিলায়ন হোমে পাঠানো হয়েছে। সেখানে থেকেই সে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Minor Marriage Jangipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE