Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Jangipur

মাদক ট্যাবলেট পাচারের পথে জঙ্গিপুর কি জংশন!

শুধু পুলিশই নয়, সীমান্ত পথে সুতির আশপাশে সম্প্রতি একাধিক বার মাদক ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে বিএসএফ জওয়ানরাও। 

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০৭:৩১
Share: Save:

মাদক ট্যাবলেট পাচারের কি রুট হয়ে উঠছে জঙ্গিপুর? গত দেড় বছর ধরে মাদক ট্যাবলেট যে ভাবে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা ও জঙ্গিপুরের সীমান্তে ধরা পড়ছে তাতে চিন্তা বেড়েছে পুলিশের। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে ব্যবহার করে এই মাদক পাচার হচ্ছে অন্যত্র। বৃহস্পতিবার ১৪ চাকার কাঠ বোঝাই ট্রাকের স্যাসির নীচে রাখা ৫০ হাজার মাদক ট্যাবলেট এমন পরিকল্পিত ভাবে পাচার হচ্ছিল যে, তা খুঁজে পাওয়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার। গুয়াহাটি থেকে আনার পথে উমরপুরে ধরা পড়ে ওই পৌনে ৫ কিলোগ্রাম মাদক ট্যাবলেট।

জুনের শেষ সপ্তাহেও বহরমপুর থানার পুলিশ ও এসওজি টিমের যৌথ অভিযানে বহরমপুর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুর উপর তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে একটি মারুতি গাড়ি সহ দুজনকে আটক করে। ধৃত দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ আরও এক জনকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে ১২ হাজার মাদক ট্যাবলেট উদ্ধার করে পুলিশ। কোচবিহার থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে ট্যাবলেটগুলি নিয়ে আসা হচ্ছিল সীমান্ত এলাকা জলঙ্গিতে।

ওই একই দিনে ৭০০০ মাদক ট্যাবলেট সহ সুতিতে এক পাচারকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে দিন সন্ধ্যে রাতে সুতি ২ ব্লক অফিসের পাশে একটি ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছিল সে।

২০ মার্চ রাতে বাংলা দেশে পাচারের পথে তিন হাজার মাদক ট্যাবলেট আটক হয় সুতি পুলিশের হাতে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধলা রামচন্দ্রপুর মোড়ে একটি ব্যাগে ভরা মাদক ট্যাবলেটগুলি নিয়ে অপেক্ষা করছিল এলাকার এক পাচারকারী। শিলিগুড়ি থেকে সেই ট্যাবলেট এনেছিল সে বাসে করে।

শুধু পুলিশই নয়, সীমান্ত পথে সুতির আশপাশে সম্প্রতি একাধিক বার মাদক ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে বিএসএফ জওয়ানরাও। জঙ্গিপুরের বাহুরা ঘাট আউট পোস্টের বটতলা চরে প্রহরারত ৭৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানরা আটক করে একটি বাইককে। বিএসএফ জানায়, বাইক চালককে তল্লাশি করে তার কাছ থেকে ছোট ছোট প্যাকেটে ভরা ১৯০০ ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তার দুদিন পরেই ফের ওই এলাকার সীমান্ত লাগোয়া চর থেকে মেলে ৯১৫টি মাদক ট্যাবলেট।

পুলিশ জানিয়েছে, সরাসরি এই মাদক ট্যাবলেট গুয়াহাটি ও অসম থেকে মুর্শিদাবাদে আনা হলেও এর মূল জোগান আসছে মায়ানমার থেকে। যেহেতু জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার ৪টি থানায় বাংলা দেশ সীমান্ত এলাকা রয়েছে সেই কারণেই মাদক ট্যাবলেট পাচারে এই রুট বেছে নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীরা।

পুলিশ জানায়, মাদক ট্যাবলেট তৈরির কাঁচামাল এ দেশের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছ থেকে চোরাপথে সংগ্রহ করে মাদক কারবারীরা। সেই কাঁচামাল সোজা চলে যায় মণিপুর হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে মায়ানমারে। সেখানে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীরা ওই কাঁচামাল থেকে ট্যাবলেট তৈরি করে। মাদক হিসাবে সেই ট্যাবলেটের বিশাল বাজার রয়েছে প্রতিবেশী দেশে।

ওই প্রতিবেশী দেশে মদ নিষিদ্ধ হওয়ায়, মাদক খাওয়ার মারাত্মক প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ খুব কড়া ব্যবস্থা নেওয়ায়, পাচারকারীরা ক্রমাগত পাচারের রুট বদলাচ্ছে। সীমান্তে সাধারণ গ্রামবাসীদের একটা বড় অংশকে ট্যাবলেট পাচারে কাজে লাগানো হচ্ছে।

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘পুলিশ ও বিএসএফ সক্রিয় বলেই ট্যাবলেট সহ বিভিন্ন মাদক পাচারের পথে ধরা পড়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। বৃহস্পতিবার কাঠ বোঝাই ট্রাকে করে গুয়াহাটি থেকে আনার পথে উমরপুরে ধরা পড়ে ৫০ হাজার মাদক ট্যাবলেট। দুজনকে ধরা হলেও বাস্তবে তারা ক্যারিয়ার। পাচারের সঙ্গে যুক্ত মাথারা ধরা না পড়ার কারনেই এই পাচারের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jangipur Drugs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE