Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শাসকের সভায় ফের জুটল মার

সৌমিত্রের ‘অপরাধ’, তিনি ফোন বের করে ছবি তুলতেই জনা বিশেক যুবক ছুটে এসে তাঁকে শাসাতে শুরু করে। বলতে থাকে— ‘ছবি তুলবি না, তুললে ভাল হবে না।’ সেই দলের সামনে ছিল চাকহের এক কুখ্যাত তোলাবাজ এবং এক খুনের আসামি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

শাসক দলের কর্মসূচিতে গিয়ে ফের গুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত হলেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার সকালে চাকদহ থানায় পুরকর্মীদের বিক্ষোভের খবর করতে গিয়ে মার খান আনন্দবাজার প্রত্রিকার সাংবাদিক সৌমিত্র সিকদার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একটি পোর্টালের সাংবাদিক। তাঁকেও পেটানো হয়েছে।

সৌমিত্রের ‘অপরাধ’, তিনি ফোন বের করে ছবি তুলতেই জনা বিশেক যুবক ছুটে এসে তাঁকে শাসাতে শুরু করে। বলতে থাকে— ‘ছবি তুলবি না, তুললে ভাল হবে না।’ সেই দলের সামনে ছিল চাকহের এক কুখ্যাত তোলাবাজ এবং এক খুনের আসামি।

সৌমিত্র বলেন, তিনি এক জন সংবাদকর্মী। খবর ও ছবি সংগ্রহ তাঁর কাজ। আর্জি জানান, তাঁকে যেন তাঁর কাজ করতে দেওয়া হয়। উত্তর আসে মুখের বদলে হাতে। ধাক্কা মারতে-মারতে সৌমিত্রকে কিছু দূর ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে পড়তে থাকে ঘুষি। সৌমিত্র মাটিতে পড়ে গেলে চারপাশ থেকে লাথি মারা হতে থাকে। ভাগ্যক্রমে, তাঁর চেনা কয়েক জন দোকানদার এসে তাঁকে টেনে তুলে বের করে নিয়ে যান। পরে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সৌমিত্রের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। রাতে তিনি চাকদহ থানায় গিয়ে লিখিত ভাবে সব জানান।

সাম্প্রতিক অতীতে শাসক দলের লোক বলে পরিচিত গুন্ডাদের হাতে বেশ কয়েক বার আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যম। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে মুর্শিদাবাদে এই কাগজেরই সাংবাদিক মার খান। কলকাতাতেও মার খান সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকেরা। যদিও এই জেলায় তেমন কিছু ঘটেনি। ভোটের দিন বুথে ঢুকে জনতার হাতে মার খেয়ে মারা যান শান্তিপুরের এক তরুণ নেতার অনুগামী। এই নিয়ে খবর করায় প্রকাশ্যে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি দেওয়া হতে থাকে সাংবাদিকদের। সপরিবার বাড়িছাড়া হন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের কর্মী। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় শ’খানেক সংবাদকর্মী শান্তিপুরের রাস্তায় মিছিল করতে বাধ্য হন। তার আগে তাহেরপুর পুরভোট বা তাপস পালের চৌমুহায় আক্রমণের ঘটনা তো আছেই।

এ দিন যারা হামলার পুরোভাগে ছিল, তারা দাগি দুষ্কৃতী। জানুয়ারিতে চাকদহে শহরের কেবিএম এলাকায় অনুষ্ঠান মঞ্চে শান্তনু শীলকে গুলি করে মারার ঘটনায় তাদের এক জন গ্রেফতার হয়। পরে জামিনে ছাড়া পায়। ওই ঘটনায় অভিযুক্তেরা প্রায় সকলেই চাকদহের তৃণমূল পুরপ্রধান দীপক চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। যদিও তিনি তা অস্বীকার করে এসেছেন। ওই সময়ে লাগাতার ঘটনাটির খবর করে নেতা ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের চোখের বালি হয়েছিলেন সৌমিত্র। সেই ঝাল মেটাতেই এ দিন কার্যত বিনা প্ররোচনায় হামলা চালানো হয়, এই সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

যদিও রাতে দীপক দাবি করেন, ‘‘সৌমিত্রকে আদৌ মারাই হয়নি। ওর সঙ্গে যে ছিল, সে একটি ফড়ে। তার উপরে এলাকার মানুষের রাগ আছে। সৌমিত্র এটা শুধু-শুধু নিজের গায়ে নিচ্ছে।’’ আর পুর কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতা পিন্টু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বুধবার রাতে আমাদের এক কর্মী আক্রাম্ত হন। তাই থানায় অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল। আমি থানার ভিতর থেকেই শুনি, বাইরে একটা গন্ডগোল হয়েছে। বেরিয়ে কিছু দেখিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Journalist Hackle Chakdaha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE