Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুদূর দীপাবলি, ইটভাটার আঁধারে আলো খোঁজে ওরা

যেমন  কাতলামারি, নবিপুর, মোহনগঞ্জ এ সব জায়গায় দুর্গাপুজোর মতোই সাড়ম্বরে পালিত হয় কালীপুজো।  এলাকার মানুষ আঁধার ভুলে আলোয় ডুবে যান। কিন্তু ওই পরিযায়ী আদিবাসী ঝুপড়িতে আলো কোথায়!

আলোর উৎসব থেকে দূরে। রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র

আলোর উৎসব থেকে দূরে। রানিনগরে। নিজস্ব চিত্র

আব্দুল হাসিম
রানিনগর শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৩
Share: Save:

সাত বছরের মিঠু মাটিতে আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটছে। ধুলোমাখা গায়ে মাটির সঙ্গে এই তার খেলা। কোথাও যেন মনে করিয়ে দেয় দীপাবলির আলপনার কথা। তার বোনের অবশ্য সে দিকে কোনও হুঁশ নেই, সে অপলক তাকিয়ে রয়েছে চিমনি থেকে ওঠা কালো ধোঁয়ার দিকে। কালী ঠাকুরের মতো আনন্দগুলো যেন আরও কালো ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাচ্ছে নীল আকাশের। মা বাবা সেই সকালে ইট ভাটার কাজে বেরিয়েছেন। কাদার সংসার ছেড়ে দুপুরের আগে ছেলে মেয়ের খোঁজ নেবার অবকাশ নেওয়ার বিলাসিতা, নাহ নেই তাদের।

ধুলোমাটি নিয়ে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে কখনও পড়ে শিশুগুলি। দীপাবলির দিনেও তাদের জন্য আলাদা কিছু অপেক্ষা করে না। অমাবস্যার রাতে চারিদিক আলোয় ভরে গেলেও তাদের ঘরে থাকে অন্ধকারের শাসন। শীতের শুরুতেই কাজের খোঁজে ভিন রাজ্য থেকে প্রচুর আদিবাসী শ্রমিকেরা ছেলে-মেয়ে নিয়েই আসেন রানিনগর সীমান্তের গ্রামগুলিতে। ইট ভাটার মাটির কাজে। আর তাই দীপাবলির মরসুমে প্রদীপের আলোটা তাদের ঘরে পৌঁছয় না কখনো। আর পাঁচটা দিনের মতোই সকাল বেলা বাপ-মা কাজে বেরিয়ে গেলে ওদের অখণ্ড অবসর।

কেউ স্থানীয় ইটভাটাতে, কেউ বা জঙ্গলে মধুর খোঁজে। দিনান্তে ওই আয়টুকুতেই দিন গুজরান। চাল, ডাল, মেটে আলু। কালীপুজোর দিনে আলোর আনন্দের সময় কোথায়!

ঝাড়খন্ড থেকে আসা রাজু জানান, ‘‘আমাদের আবার আনন্দ! কোথায় পাব মোমবাতি, কোথায় ফুলঝুড়ি, ওই নিয়েই আছি, বাচ্চারাও ওই নিয়েই খেলে।’’ তবে দিন শেষে যখন বাবা বাদুড় কিংবা মুরগি শিকার করে আনলেই থইথই আনন্দ।

সীমান্তের গ্রামগুলি যেমন কাতলামারি, নবিপুর, মোহনগঞ্জ এ সব জায়গায় দুর্গাপুজোর মতোই সাড়ম্বরে পালিত হয় কালীপুজো। এলাকার মানুষ আঁধার ভুলে আলোয় ডুবে যান। কিন্তু ওই পরিযায়ী আদিবাসী ঝুপড়িতে আলো কোথায়!

শীতের শুরুতে এলাকা জুড়ে জায়গায় জায়গায় গোটা বিশেক করে তাঁবু খাটিয়ে এ ভাবেই তীঁদের রাত্রিযাপন। তবে তা নতুন নয়। প্রতি বছরই কাজের খোঁজে আসেন তাঁরা।

কাতলামারি গ্রামে বেশ কিছু আদিবাসী মানুষ আস্তানা গেড়েছেন মাঠের কিনারে। তার মধ্যে দেখা মিলল এক খুদের। সে আপাতত বাদুড় নিয়ে ব্যস্ত। তা দিয়েই হবে আজ রাত্রির আহার। কালীপুজোয় বাজি ফাটাতে, কিংবা আনন্দ করতে ইচ্ছে করে না ওদের? ভাঙা হিন্দিতে তার মা’ই জবাবটা দিয়ে দেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের এক পাথুরে প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বাড়ি। শীতের শুরুতে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। ভাটায় সারা দিন কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনও রকমে চলে, এটাই আমাদের এক মাত্র আনন্দ।’’ আঁধার পুজোয় সেটুকুই আলো ওঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE