Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যে প্রথম ‘হাইপেক’ কল্যাণীতে

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বছর কয়েক আগে এই পদ্ধতিতে পাকস্থলীর ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৭
Share: Save:

রাজ্যে এই প্রথম হাইপার থারমিক ইন্টারপেরিটেনিয়াল কেমোথেরাপির (হাইপেক) মাধ্যমে জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসা হল কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বছর কয়েক আগে এই পদ্ধতিতে পাকস্থলীর ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের গোড়ার দিকে এই প্রদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় জরায়ুর ক্যানসারের ক্ষেত্রে। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক মৃগাঙ্কমৌলি সাহা বলেন, ‘‘চালু হওয়ার পর থেকে এই প্রদ্ধতিতে দেশের মাত্র তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে। দিল্লির এইমস, মনিপালের একটি হাসপাতাল ও মুম্বইয়ের একটি নামী ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্রে ওই পদ্ধতিতে জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসা হয়েছিল।’’ এ রাজ্যে জেএনএমেই প্রথম এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর কল্যাণী বিশ্বাসের চিকিৎসা হয়েছিল। তিনি এখন সুস্থ। শুক্রবার প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় সফল ভাবে ওই মহিলার অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপি হয়।

ওই মহিলার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি দিন পনেরো আগে পেটে ব্যথা নিয়ে সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, কলকাতার কোনও মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগে দেখাতে হবে। নিম্নবিত্ত পরিবারের ওই মহিলা এর পরে বাড়ি থেকে স্বল্প দূরত্ব হওয়ার কারণে জে এন এম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। ২৯ ডিসেম্বর সেখানে ভর্তি হওয়ার পর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, মহিলার জরায়ুতে টিউমার রয়েছে। পেটে জলও জমেছে। মহিলাকে পাঠানো হয় প্রসুতি বিভাগে। সেখানে তিনি মৃগাঙ্কে তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন। মৃগাঙ্ক জানান, বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে ওই মহিলার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিন ছ’জন চিকিৎসকের একটি দল ওই অস্ত্রোপচার করেন। টিউমার বাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জরায়ুও বাদ দেওয়া হয়। পাছে ক্যানসারের কোষ শরীরের অন্য কোনও অংশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্যানসার শরীরে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। অণুবিক্ষণীক কোষ খালি চোখে দেখা যায় না। ফলে অস্ত্রোপচারের পরে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখতে হয়, ক্যানসারের জীবানু রয়েছে কি না। কিন্তু অস্ত্রোপচারের সময়েই হাইপেক পদ্ধতিতে কেমোথেরাপি করলে সেই কোষ সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। পরে আর ফিরে আসে না। এ দিন শিয়ালদহের এএসআই হাসপাতালের এক জন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের সাহায্যে জে এন এম হাসপাতালেই ওই মহিলাকে এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।

স্যালাইনের সঙ্গে কেমো মিশিয়ে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মহিলার শরীরে প্রবেশ করানো হয়। আবার ঘণ্টা দেড়েক পরে তা বার করে নেওয়া হয়। হাইপেক পদ্ধতি প্রয়োগের নির্দিষ্ট যন্ত্র এখানে না থাকায় চিকিৎসকেরা নিজেদের মতো করে থার্মোমিটার, বয়লার ও দু’টি নল ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে কেমো দেন। মৃগাঙ্ক বলেন, ‘‘এই কারণে একে মডিফায়েড হাইপেক প্রদ্ধতি বলাই ভাল।’’ হাসপাতালের চিকিৎসক মধুমিতা রায় বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এক বার হাসপাতাল থেকে টিউমার ও জরায়ু বাদ দেওয়ার পরে রোগী বাড়ি গেলে অনেক সময় পুনরায় হাসপাতালমুখী হতে চান না। ফলে পুনরায় ক্যানসার ধরা পড়লে সমস্যা হয়।’’ এই প্রদ্ধতি অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োগ করার ফলে রোগীর দেহের অ-দেখা ক্যানসারের কোষগুলি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রোগীদের বার বার পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসতে হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE