জলছবি: উপরে, নদী খুঁড়ে জল সংগ্রহ করছেন মহিলারা। ভবানীপুর ও পার্বতীপুর এলাকায়।
তেষ্টার জলের জন্য দীর্ঘ পথ হাঁটতে হচ্ছে নবগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের।
কান্দির পুরন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পার্বতীপুর, ডোবেরডাঙা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দারা আজও গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কানা ময়ূরাক্ষী নদীর মাটি খুঁড়ে সংগ্রহ করতে হয় জল।
বুধবার ভবানীপুর এলাকায় দেখা গেল, ময়ূরাক্ষী নদী থেকে বালি বোঝাই ডাম্পার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা বালি থেকে ঝরছে জল। ডাম্পারের নীচে হাঁড়ি, বালতি রেখে জল সংগ্রহ করছেন মহিলারা।
‘‘স্বাধীনতার এত বছর পরেও তেষ্টার জলের জন্য আর কত ঘাম ঝরাতে হবে, বলতে পারেন?’’—প্রশ্নটা ছুড়ে দিচ্ছেন নবগ্রাম, পুরন্দরপুরের বাসিন্দারা। বিশ্ব জল দিবসেও যে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারছেন না প্রশাসনের কর্তারা।
নবগ্রাম ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা তীব্র জলকষ্টে ভুগছেন। বিষয়টি কবুল করে স্থানীয় বিডিও ধেনডুপ ভুটিয়া বলছেন, ‘‘নবগ্রাম ব্লকে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। প্রতিটি পঞ্চায়েত প্রধানকে নলকূপ কিনে বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ মহলদারপাড়ার বাসিন্দাদের জল সংগ্রহ করার জন্য হেঁটে এক কিলোমিটার পথ পার হতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা জগন্নাথ ভাণ্ডারি বলেন, ‘‘প্রতি দিন সকাল ৭টা নাগাদ যেতে হয় জল আনতে। জল নিয়ে বাড়ি ফিরতে পাক্কা দেড় ঘন্টা লাগে। সকালে যেতে দেরি হলে সেখানে লম্বা লাইন পড়ে যায়। তখন জল নিয়ে বাড়ি ফিরতে আরও দেরি হয়ে যায়।’’
মহলদারপাড়ায় প্রায় ৩০টি পরিবারের বাস। রয়েছে সাকুল্যে একটি মাত্র নলকূপ। তাও সেটি ছ’মাস আগে বিকল হয়ে গিয়েছে। নবগ্রামের বিধায়ক সিপিএমের কানাই মণ্ডল জানান, এলাকার প্রায় ১১৮টি মৌজায় ভূগর্ভস্থ জলের অবস্থা সঙ্কটজনক। মাটির প্রায় ১০০ ফুট নীচে পাইপ বসিয়েও জল ওঠে না।
নবগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের হরেকৃষ্ণ কোনাই বলেন, ‘‘নবগ্রাম ব্লক জুড়ে তীব্র জল-সঙ্কট রয়েছে। জলের অভাব মেটাতে কী যে করব বুঝে উঠতে পারছি না। সাধারণ নলকূপে জল উঠছে না। অন্য নলকূপ বসানোর মতো অর্থ পঞ্চায়েত সমিতির নেই। অসহায় অবস্থার মধ্যে আমরা রয়েছি।’’
বহু বছর ধরে নদীর মাটি খুঁড়ে জল সংগ্রহ করতে হয় পুরন্দরপুর এলাকার বাসিন্দাদের। পঞ্চায়েত থেকে যে সমস্ত নলকূপ করে দেওয়া হয়েছে সেগুলো বছরে মাস দু’য়েক ভাল থাকে। বাকি সময় বিকল হয়ে পড়ে থাকে। তা ছাড়াও ওই এলাকার নলকূপের জল এতটাই দূষিত যে, সে জল মুখে তোলা যায় না।
খাওয়া বা রান্না করার জন্য ভরসা নদী খুঁড়ে জল কিংবা বালি বোঝাই ডাম্পার থেকে চুঁইয়ে পড়া জল। এ দিন, ভবানীপুরের মোড়ে একটি বালি বোঝাই ডাম্পার কিছুক্ষণের জন্য দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন চালক। রাস্তার পাশের বাসিন্দারা বালতি, গামলা নিয়ে ডাম্পার থেকে ঝরে পরা জল নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইয়াসমিন বিবি বলছেন, ‘‘কী করব বলুন! নলকূপের জল যে মুখে তোলা যায় না। তাই খাওয়া কিংবা রান্নার জলের জন্য ভরসা রাখতে হয় ডাম্পার কিংবা নদীর উপরেই।’’
পার্বতীপুর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কানা ময়ূরাক্ষী। মাটি খুঁড়ে সকাল-বিকেল জল সংগ্রহ করেন মহিলারা। আসমাতুন বিবি, মরিয়াম বিবিরা বলছেন, “আমরা সেই ছেলেবেলা থেকেই এ ভাবেই জল তুলি। একই কষ্ট করে চলেছে আমাদের নাতি-নাতনিরাও।’’ কান্দির বিডিও সুরজিৎ রায় বলছেন, “এমনটা তো আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy