Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জমি বাঁচাতে দু’বছরে দু’বার দলবদল খলিলের

রবি ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সেই উপেনকে রাজা বলেছিল—‘পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা—ওটা দিতে হবে!’ রাজার সঙ্গে পেরে ওঠেনি উপেন। সাতপুরুষের সেই ভিটে হারিয়ে দেশান্তরি হতে হয়েছিল তাঁকে। মুর্শিদাবাদের আব্দুল খলিল অবশ্য এত সহজে হাল ছেড়ে দেননি। নিজের পৌনে আট কাঠা জমিটাকে বাঁচাতে তিনি গত দু’ বছরে দু’বার দলবদল করেছেন। মঙ্গলবার তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে খলিল বলছেন, ‘‘যে ভাবেই হোক জমিটাকে বাঁচাতে হবে।’’

সহায় এ বার কংগ্রেস।— নিজস্ব চিত্র।

সহায় এ বার কংগ্রেস।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০১:৫৫
Share: Save:

রবি ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সেই উপেনকে রাজা বলেছিল—‘পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা—ওটা দিতে হবে!’ রাজার সঙ্গে পেরে ওঠেনি উপেন। সাতপুরুষের সেই ভিটে হারিয়ে দেশান্তরি হতে হয়েছিল তাঁকে। মুর্শিদাবাদের আব্দুল খলিল অবশ্য এত সহজে হাল ছেড়ে দেননি। নিজের পৌনে আট কাঠা জমিটাকে বাঁচাতে তিনি গত দু’ বছরে দু’বার দলবদল করেছেন। মঙ্গলবার তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে খলিল বলছেন, ‘‘যে ভাবেই হোক জমিটাকে বাঁচাতে হবে।’’
তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন ও তাঁর ছেলে তথা রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী তৃণমূল পরিবারের জমি ও দোকানঘর জবর দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। পিতা মান্নান ও পুত্র সৌমিকের বিরুদ্ধে আব্দুল খলিল নামের ওই প্রতিবেশীর আরও অভিযোগ, তাঁরা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ায় ১০ দিন ধরে তাঁদের পরিবারের সবাই বাড়ি ছাড়া। ওই অভিযোগ তুলে তাঁদের পরিবারের ১৪ জন সদস্য মঙ্গলবার তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৪ জনের মধ্যে রয়েছেন বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজিত প্রার্থী তথা আব্দুল খলিলের মেয়ে রেবিনা বিবি। এ দিন বহরমপুরে দলের জেলা কার্যালয়ে তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
অভিযোগ অস্বীকার করে মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘আব্দুল খলিল আমার প্রতিবেশী ঠিকই, কিন্তু তাঁর মেয়ে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী ছিল কি না জানি না। আমার সঙ্গে কিছু ঘটেনি। সৌমিকের সঙ্গে সামান্য কিছু একটা হয়েছে।’’ সৌমিকের কথায়, আব্দুল খলিলের মেয়ে রেবিনা বিবি গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়ালেও আসলে তিনি ছিলেন কংগ্রেসের ড্যামি প্রার্থী। এ জেলায় কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক পড়ে যাওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কংগ্রেস। তাই তাঁরা কংগ্রেসের আব্দুল খলিলকে সপরিবারে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার নাটক সাজিয়েছেন। তাঁর ওদের বিবাদ নেই বলেও সৌমিকের দাবি।

ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে বহরমপুর শহর। আর পশ্চিমপাড়ে দেড় কিলেমিটার দূরে শিয়ালমারা এলাকায় বহরমপুর-কান্দি রাজ্য সড়কের পাশেই মান্নান হোসেনের বাড়ি। তার পাশেই আব্দুল খলিলের পৌনে ৮ কাঠা জায়গার উপর রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার পাশেই রয়েছে কাঠা দশেক জমি-সহ সৌমিক হোসেনের বাড়ি। মাঝে থাকা পৌনে ৮ কাঠা জায়গা পেলে পিতা-পুত্রের বাড়ি থাকবে এক লপ্তে প্রায় এক বিঘারও বেশি জমির উপর। এ কথা জানিয়ে আব্দুল খলিল বলেন, ‘‘এ কারণে আমার জমির উপর ওঁদের চোখ পড়ে আছে বছর তিনেক ধরে। ওঁরা সস্তায় জমিটা কিনতে চেয়ে প্রস্তাব দেয়। আমার এক ছেলে চোখারে চিকিৎসক। ছেলে ওখানে নার্সিংহোম করবে। তাই জমি বেচতে রাজি হয়নি। আর সেটাই হল কাল!’’

২০১২ সালে কংগ্রেস নেতা মান্নান হোসেন শতাধিক লোক নিয়ে চড়াও হয়ে ওই জমি জবরগখল করে। ওই অভিযোগ তুলে আব্দুল খলিল বলেন, ‘‘তখন জমি পুনরুদ্ধার করতে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাই। জমি পুনরুদ্ধার হয়। আমার মেয়ে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়। কয়েক মাস আগে মান্নান ও সৌমিক কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে যেতেই ফের জমি হাতাতে তাঁরা বাপ-বেটা তৎপর।’’ পাকা সড়ক থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের রাস্তা উঁচু করতে মাটি ফেলার কাজ শুরু করেন আব্দুল খলিল। তিনি বলেন, ‘‘ভাড়া করা ট্রাক্টরে মাটি ফেলা শুরু হতেই সৌমিক প্রভাব খাটিয়ে ৪ মে পুলিশ দিয়ে ট্রাক্টর আটক করায়। ট্রাক্টর চালককে চাপ দিয়ে আমাদের ৪ জনের নামে পুলিশের কাছে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমার বড় ছেলে হজরত শেখকে পুলিশ গ্রেফতারও করে।’’

মুর্শিদাবাদ থানার খুনিয়া পুকুরের ওই ট্রাকটর চালকের নাম সাদিকুল শেখ। গত ৭ মে সাদিকুল শেখ এফিডেবিট করে আদালতে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতাদের চাপে প্রকৃতির আব্দুল খলিলদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। তাঁদের জামিন দিলে আমার আপত্তি নেই।’’ ফলে হজরত শেখের জামিন মেলে ঘটনার এখানেই ছেদ পড়ার কথা থাকলেও পড়েনি।

আব্দুল বলেন, ‘পাকা সড়ক থেকে দোকানে যাওয়ার রাস্তা সমতল করার কাছ চলছিল ১৪ জুন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে সৌমিক তার তিন পেটুয়া লোক দিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা করেছে। ফলে পুলিশের তাড়া খেয়ে ১০ দিন ধরে সপরিবারে বাড়ি ছাড়া।’’

মান্নান হোসেন অবশ্য জানান, আমার সঙ্গে কোনও ঘটনা ঘটেনি। সৌমিকের জামিও বাড়ির সামনের জায়গা খলিল অন্যায় ভাবে ঘিরে নিচ্ছিল। সে ব্যাপারে সৌমিক আপত্তি তুলেছে। সৌমিক অবশ্য অন্য কথা বলেন। তাঁর কথায়, শেরফুল শেখ, নজরুল শেখ ও লাল্টু শেখ নামে ৩ জন খলিলের কাছে টাকা পাবেন। সেই টাকা চাইতে গেলে খলিলরা শেরফুলদের মারধর করে। তাই ওরা খলিলদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিয়োগ করেছেন। খলিল বলেন, ‘‘আমদের পুলিশ দিযে জব্দ করতে সৌমিক তার পেটুয়া লোক শেরফুলদের দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় সাজানো অভিযোগ করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE