Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

চৈত্রে শিবির শুকিয়েছে, টান রক্তের

মুর্শিদাবাদ জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক ‘এ’ ছাড়া আর কোনও গ্রুপের রক্ত নেই। রোগীর পরিবারকে সঙ্গে রক্তদাতা আনার পরামর্শ দিচ্ছে তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

গরম সবে পড়তে শুরু করেছে। আর এর মধ্যেই রক্তের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে।

মুর্শিদাবাদ জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক ‘এ’ ছাড়া আর কোনও গ্রুপের রক্ত নেই। রোগীর পরিবারকে সঙ্গে রক্তদাতা আনার পরামর্শ দিচ্ছে তারা। প্রায় একই অবস্থা নদিয়ার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের। রক্তদান শিবির থেকে কী আসে, তার জন্য রোজ তীর্থের কাকের মতো পথ চেয়ে বসে থাকছেন রোগীর আত্মীয়েরা।

গত শনিবার রাতে বহরমপুরের উত্তরপাড়ার কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে এক জনের বাঁ পায়ের উপর দিয়ে ডাম্পারের চাকা চলে গিয়েছিল। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের আগে ‘ও পজিটিভ’ জোগাড় করতে হবে। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে তা নেই। বাধ্য হয়ে অস্থি-শল্য চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীকে ডেকে পাঠান। তিনি এসে রক্ত দেওয়ার পরে অস্ত্রোপচার শুরু হয়।

শক্তিনগর হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে দৈনিক গড়ে ৫০ প্যাকেট রক্ত লাগে। তবে এখন তার জোগান প্রায় অর্ধেক। সোমবার দুপুরে প্রসূতি ও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য সংরক্ষিত রক্ত বাদে সাধারণ রোগীদের জন্য মাত্র ১৫ ইউনিট রক্ত ছিল। শক্তিনগরে ভর্তি আছেন বিনয় মণ্ডলের স্ত্রী। তাঁর দু’বোতল রক্ত দরকার। কিন্তু এবি (পজিটিভ) রক্ত না থাকায় পাচ্ছেন না। এক মাত্র আশা, যদি শিবির থেকে ওই গ্রুপের এক প্যাকেট রক্তও আসে। জঙ্গিপুর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে পড়ে আছে ৩৮ ইউনিট। দীর্ঘ দিন ধরেই তারা থ্যালাসেমিয়া রোগী ও প্রসূতি বাদে আর কাউকে রক্ত দিলে তার বিনিময়ে রক্ত নেয়। কিন্তু তাতেও সব গ্রুপের রক্ত মেলে না।

মুর্শিদাবাদ জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৬৫৩ প্যাকেট রক্ত পেয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। এর পরে শুধু নওদার আমতলায় একটি শিবির থেকে ৪০ প্যাকেট রক্ত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরে আর কোনও শিবিরও নেই। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক তথা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা জানান, রক্তের অভাব মেটাতে প্রতি মাসে একটি করে শিবির করার কথা প্রতিটি ব্লকের বিএমওএইচদের জানানো হয়েছে। যা অবস্থা, তাতে রোগীর বাড়ির লোক রক্তদাতা নিয়ে না এলে রোগীর রক্ত পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই।

নদিয়ায় শিবির থেকে দিনে ২০-২৫ প্যাকেটের বেশি রক্ত সংগ্রহ হচ্ছে না। জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মীর কথায়, “দিন কয়েক আগেই ১০০ ইউনিট রক্ত দেবে বলে আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়েছিল করিমপুরের একটি সংস্থা। ১৫ প্যাকেটের বেশি পেলাম না।” তার উপরে শিবির বাতিল হওয়া তো আছেই। শক্তিনগর হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের মতে, “মানুষ সে ভাবে শিবিরে রক্ত দিতে এগিয়ে না আসার কারণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।”

সে তো জানা কথা। কিন্তু বছরের পর ধরে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না কেন, সেটাই আসল প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

summer Blood Blood Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE