মডেলের সাজ। নিজস্ব চিত্র
বছর চার-পাঁচ আগের ঘটনা। বিধাননগরের এক পুজোয় জীবন্ত মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছিল ‘কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’ থিমটি। সেখানে কৃত্রিম জলাশয়ের মধ্যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল মডেল সাজা এক তরুণের। দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে হঠাৎই নজরে আসে জলের মধ্যে একটি সাপ ঘুরছে। তবুও এতটুকু না নড়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই তরুণ। পরে স্বেচ্ছাসেবকেরা তা দেখতে পেয়ে সাপটিকে তাড়িয়ে দেন।
শান্তিপুরের স্থির মডেলের শিল্পীদের কাজের সঙ্গে জুড়ে আছে এমনই নানা অধ্যাবসায়, মনসংযোগ আর ধৈর্যের গল্প।
পথ চলা শুরুর সময়ে সে ভাবে এগিয়ে না এলেও এখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে জীবন্ত মডেল শিল্প। শান্তিপুর শহর এবং আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেই এখন ঝুঁকছেন এই শিল্পের দিকে। শান্তিপুরের বহুরূপী জীবন্ত মডেল কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে শান্তিপুর থানা এলাকার প্রায় দেড় হাজার মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের নানা জেলা ছাড়াও অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মত ভিনরাজ্য থেকে ডাক পান এখানকার শিল্পীরা। বিভিন্ন পুজো বা উৎসব তো আছেই, সঙ্গে জন্মদিন, বিয়ের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা ডাক পান। শুধুমাত্র স্থির মডেলের মাধ্যমে নানা সামাজিক বার্তা, সাম্প্রতিক কালের ঘটনা তুলে ধরা হয় ইদানীং। এ ছাড়াও নানা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তাঁরা হাজির হন গোপাল ভাড়, ছোটা ভীম, মিকি মাউস বা চার্লি চ্যাপলিনের সাজে।
জানা গেল, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিল্পীদের চরম মনসংযোগ এবং ধৈর্য। বিভিন্ন সময়ে দর্শকদের সামনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয়। দেহের মাংসপেশীর সামান্য নড়াচড়াও করা যায় না। এই শিল্পের সঙ্গে প্রায় কুড়ি বছর ধরে যুক্ত রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “আমাদের পেশায় মনসংযোগ হচ্ছে আসল। সামনে যা কিছু ঘটে যাক, সামান্য নড়াচড়াও করা যায় না। দর্শকদের সামনে সেই মডেলের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে হয় নিজের মধ্যে দিয়েই। সেই সময়ে যদি মশা বা পিঁপড়েও কামড়ায়, মুখ বুজে সহ্য করে নিতে হয়।” শিল্পীদের থেকে জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠান বাড়ির ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা এবং পুজো বা উৎসবের ক্ষেত্রে তাঁরা পান ১০০০ টাকা করে।
প্রায় ১৬ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত শান্তিপুরের সত্যম দাস জানান, শান্তিপুরের স্থির মডেল শিল্পের প্রাণপুরুষ অমরেশ রায়ের কাছে তাঁর হাতেখড়ি। তিনি বলেন, ‘‘এখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পাই। নতুন নতুন ছেলেরাও আসছে। ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে এই শিল্প।” যার প্রমাণ, পুজার সময়ে শো করতে গেলে সারা দিনে দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তিন শিফটেও কাজ করেন শিল্পীরা। শান্তিপুরের এই শিল্প ক্রমশ ছড়াচ্ছে অন্য রাজ্যেও। নাম কুড়োচ্ছে শিল্পীদের দক্ষতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy