মাস পয়লায় ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। পেনশন তুলতে তাতে শামিল বয়স্করাও। কিন্তু পরস্পরের মধ্যে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় নেই। নির্বিকার প্রশাসন। রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
লালগোলার বাসিন্দা রাবিনা বেওয়ার উচ্চ রক্তচাপ। ওষুধ আনতে হয় বহরমপুর থেকে। কিন্তু লকডাউনের সময়, রাবিনা সেখানে যাবেন কী করে? তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে লালগোলা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সমস্ত ওষুধ বিনা মূল্যে এনে দিয়েছেন পঞ্চায়েতের এক সদস্য। শুধু রাবিনা নন, গোটা লালগোলা পঞ্চায়েতের দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের এই মুহূর্তে দরকারি সমস্ত ওষুধের দায়িত্ব নিয়েছে লালগোলা পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের প্রধান অজয় ঘোষ জানান, শুধু দরিদ্র পরিবারের ওষুধ কিনে দেওয়াই নয়, যাঁদের পয়সা দেওয়ার সামর্থ্য আছে অথচ লকডাউনের জেরে বাইরে বেরোচ্ছেন না, তাঁরা তাঁদের ওষুধের প্রেসক্রিপশন ও টাকা দিলেই ওষুধ কিনে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে পঞ্চায়েত সদস্যরা। লালগোলা পঞ্চায়েত এলাকায় তিনটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরুরি সমস্ত ওষুধ পঞ্চায়েতের তরফে কিনে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। লালগোলার বাসিন্দা বিকাশ চৌধুরী রক্তে শর্করা বেশি থাকায় অসুস্থ। তাঁকে বহরমপুর থেকে ওষুধ কিনে আনতে হয়। তিনিও এ দিন ওষুধ পেয়ে বললেন, ‘‘এই অবস্থায় আমাদের পঞ্চায়েত আমাদের পাশ দাঁড়িয়েছে।’’
কিন্তু অনেক জায়গায় ওষুধের জোগানে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ঠিক কী অবস্থা জেলার?
জেলার নানা প্রান্তের সঙ্গে বেলডাঙা বা বহরমপুরে অনেক ওষুধের দোকান সব সময় খুলছে না। খুললেও সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেটা খুচরো ও পাইকারি দুই রকম ক্ষেত্রেই হচ্ছে। বেলডাঙা শহরে অনেক দোকান সন্ধ্যার পর বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যেটুকু সময় খোলা থাকছে সেই সময়ে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। তবে প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলছে না অনেক ক্ষেত্রেই। বেলডাঙার খুচরো ওষুধের ব্যবসায়ী অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি নিজে দোকান চালাচ্ছি ১৬ বছর। এই ধরনের অবস্থা দেখিনি। আমার দোকানে সারা সপ্তাহে বহরমপুর থেকে ১৪ জন ওষুধ দিতে আসেন। লকডাউনের ফলে কেউ আসছেন না। ফলে দোকানের স্টক ফুরিয়ে গিয়েছে। প্রেসার, সুগাররের মতো নানা অসুখের ওষুধ ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে পারছি না। তাঁরা এখন কোথায় যাবেন।” খুচরো কারবারি রাজীব দত্ত বলেন, “অনেক দোকান সময় মতো খুলছে না। ফলে যাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে দোকান খোলা রাখেন, তাঁদের উপরে চাপ বাড়ছে। আমি নিজে বহরমপুর থেকে ওষুধ কিনে আনি। কিন্তু সেখানেও প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর ভিড়। অনেক ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। যে পরিমাণ চাইছি সেই পরিমান মিলছে না। ফলে অনেক মানুষ ওষুধ পাচ্ছেন না।”
বহরমপুরের পাইকারি ওষুধ বিক্রেতা পরেশ চক্রবর্তী বলেন, “গত ১০ বছর এই ব্যবসার সঙ্গে রয়েছি। এই অবস্থা দেখিনি। কলকাতার বাইরে থেকে আমরা ওষুধ আনি। দিল্লি, পঞ্জাব, আমদাবাদ থেকে ওষুধ আসে। কিন্তু গত ১৯ মার্চ অর্ডার দিয়েছি। ২৬ মার্চ বহরমপুর চলে আসার কথা। এখনও আসেনি। কলকাতা ঢোকার আগে কোথায় আটকে রয়েছে, সেটাও বুঝতে পারছি না। কলকাতার বাগরি মার্কেটে যে স্টক রয়েছে, সেটাই কিছুটা জোগান হচ্ছে। এই স্টক ফুরলে হাহাকার লেগে যাবে।”
বেঙ্গল কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি শুভ্র ঘোষ অবশ্য বলেন, “এটাকে ক্রাইসিস বলব না। তবে বহরমপুর পাইকারি মার্কেটে যেখান থেকে ওষুধ আসে সেই সিএনএফ কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে খুলেছে। কিন্তু তাদের ৫০ জন কর্মীর মধ্যে ২০ বা ২৫ জন আসছেন। তাঁরা সময় মতো বিল করে, ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে তিন দিনের স্থানে ছয় দিন লাগছে পণ্যটা আসতে। সেই মতো ওষুধ খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছচ্ছে। এই সমস্যাও মিটে যাবে।”
ক্রেতারা কী বলছেন?
সনাতন বিশ্বাস বলেন, “প্রতি মাসের প্রথমে সুগার, প্রেসার, থাইরয়েডের ওষুধ কিনি সারা মাসের। এপ্রিলের চার দিন হয়ে গেল। কিন্তু এক পাতাও ওষুধ হাতে আসেনি। এক জনকে টাকা দিয়েছি তার বাড়িতে দিয়ে
যাওয়ার কথা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy