Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

লকডাউনে ২৫ এলাকা

প্রথম দিকে যখন জেলায় করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলতে শুরু করেছিল, তখন গোটা গ্রামকেই কন্টেনমেন্ট জ়োনে পরিণত করা হচ্ছিল।

 করোনা থেকে বাঁচতে ভরসা আঁচল। রানাঘাটের পাশে রামনগরের কনটেনমেন্ট জ়োনে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

করোনা থেকে বাঁচতে ভরসা আঁচল। রানাঘাটের পাশে রামনগরের কনটেনমেন্ট জ়োনে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে কঠোর লকডাউন বিধি বলবৎ হচ্ছে নদিয়ার ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এও। এত দিন ‘বাফার জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলিকেও কন্টেনমেন্ট জ়োনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার রাত পর্যন্ত এ রকম ২৫টি এলাকা তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই সব এলাকার বাসিন্দাদের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পোঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

এরই মধ্যে কৃষ্ণনগরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোডে ৬৬ বছর বয়সী এক করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ব্লাড ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত ২ জুলাই তাঁকে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরের দিনই তাঁর মৃ্ত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাঁর লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। আগেই তাঁর বাড়ি ঘিরে কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হয়েছিল। আজ থেকে সেখানে কন্টেনমেন্টের এলাকা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

প্রথম দিকে যখন জেলায় করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলতে শুরু করেছিল, তখন গোটা গ্রামকেই কন্টেনমেন্ট জ়োনে পরিণত করা হচ্ছিল। সেটা পলাশিপাড়ার শ্রীকৃষ্ণপুর হোক বা চাপড়ার চারাতলা গ্রাম। কিন্তু পরে তার বদলে আক্রান্ত ব্যক্তি যে বুথে থাকেন সেই বুথ বা পাড়াকে কন্টেনমেন্ট জ়োন করে পাশের তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাফার জ়োন তৈরি করা হচ্ছিল। কন্টেনমেন্ট জ়োনে বাড়ি থেকে কাউকে বের হতে দেওয়া হত না। আর বাফার জ়োনে সেই কড়াকড়ি না থাক লেও সেখানে জ্বরের সমীক্ষা করা হত, কোন রকম জমায়েত করতে দেওয়া হত না। কিন্তু এ বার ফের বাফার জ়োন তুলে দিয়ে পুরোটাই লকডাউন করা হচ্ছে। তবে শহর এলাকায় সংক্রমণ স্থানের চার দিকের রাস্তার মাঝের বসতি কন্টেনমেন্ট জ়োনে পরিণত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, লকডাউন এলাকায় চাল, ডাল আটা, আনাজ, জল, দুধ ও ওষুধের মতো জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্লকের ক্ষেত্রে বিডিও আর পুরসভার ক্ষেত্রে প্রশাসকদের উপরে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কন্টেনমেন্ট জ়োনের মানুষকে চারটি করে ফোন নম্বর দেওয়া হবে। একটি নম্বর আনাজ ও মুদির দোকানের সামগ্রীর জন্য, একটি ওষুধের জন্য, একটি টাকা তোলার জন্য এবং একটি দুধ-জলের জন্যও নির্দিষ্ট থাকবে। ওই সব নম্বরে ফোন করলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কারা সেই কাজ করবেন, তা ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিডিও এবং প্রশাসকদেরই।

তবে কন্টেনমেন্ট জ়োনে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেতে গেলে টাকা লাগবে। কিন্তু দিনের পর দিন ঘরে আটকে থাকলে বাসিন্দাদের পকেটে টান পড়তে পারে। এ নিয়ে আগেও কোথাও কোথাও ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে, যার বড় উদাহরণ নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরি। সেখানে মাঠপাড়ায় একই পরিবারের দু’জনের করোনা ধরা পড়ায় ওই এলাকা কনটেণ্টমেণ্ট জ়োন বলে ঘোষনা করা হয়েছে। ওই পরিবারের একটি ছেলে বাইরে কাজে করতেন। বাড়ি ফেরার পরে তাঁরই সংক্রমণ ধরা পড়েছে। পরে তাঁর মা এবং ভাইও আক্রান্ত হন। কিন্তু এর পর বেথুয়াডহরি মধ্যপাড়ায় কন্টেনমেন্ট জ়োন করা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাদের বচসা বাধে। স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় প্রথমে এক পরিবারের এক নাবালকের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার পরেই ওই এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জ়োন বলে ঘোষণা করা হয়। তার পরেই সোমবার ওই পরিবারের চার জনের করোনা ধরা পড়ে। তার জেরে কনটেণ্টমেণ্টের দিন বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ক্ষোভের প্রধান কারণ, এলাকার গরিব মানুষ এত দিন বাড়িতে বসে থাকলে
খাবেন কী?

তবে এ সবের মধ্যে কিছুটা হলেও আশার খবর এই যে জেলায় কোনও অফিস-কাছারি, আদালত বা অন্য কোনও জরুরি দফতর কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে পড়েনি। ফলে এখনই কোনও প্রশাসনিক দফতর বন্ধ করতে হচ্ছে না। বন্ধ হচ্ছে না কোনও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার যান চলাচলও। জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলির এলাকা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম কড়াকড়ি করা হবে। ওই সব এলাকায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সব চেষ্টাও
জারি থাকবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus LOckdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE