নিহত আলতাফ শেখ
ডোমকল আছে ডোমকলেই, ভোটের আগে নৃশংস খুনের ঘটনা দিয়েই আবার তা প্রমাণ করল মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক এই এলাকা। সোমবার রাতে সেখানে খুন হয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ আলতাফ সেখ (৫০)। ভোটের মুখে ওই খুনের জেরে জেলা প্রসাসনের কাছে এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার রাতে আলতাফ খুনের ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন গড়াইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তৃণমূলের সাব্বির আহমেদ। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আটক করা হয়েছে এক জনকে। তবে অভিযুক্তদের নাম এখনই প্রকাশ করতে রাজি নয় পুলিশ। কমিশনের রিপোর্ট তলব নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলাশাসক পি উলাগানাথন। তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের চিঠি পাইনি তবে পেলেই রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আমরা তৈরি। এর বেশি কিছু বলব না।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, ওই রিপোর্টে, খুনের পিছনে রাজনৈতিক কারণ নয়, একটি টেন্ডার ডাকাকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরেই খুন করা হয়েছে ওই কর্মাধ্যক্ষকে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে দশটা নাগাদ, শাহাদিয়াড় থেকে ঘরোয়া মিটিং করে বাড়ি ফিরছিল আলতাফ ও সাব্বির আহমেদ। মোল্লাতলা এলাকায় ইদ ময়দানের ঠিক সামনে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মারুতি ভ্যান তাঁদের বাইকে ধাক্কা মারে। পাশের নয়ানজুলিতে ছিটকে পড়ে দু'জনেই। সঙ্গে সঙ্গে চার পাঁচ জন দুষ্কৃতী আলতাফকে চেপে ধরে কোপাতে থাকে। সাব্বিরকে আক্রমণ করলেও জখম হয়ে কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচে সে। ঘটনাস্থলে একটি মাত্র বাড়ি। সেই বাড়ির এক মহিলা বলেন, ‘‘সবে খেতে বসেছি। চেঁচামেচির শব্দে বেরিয়ে দেখি নয়ানজুলির দিকে ছুটে যাচ্ছে কয়েকজন। আমি দু’পা এগোতেই ওই গাড়ি থেকে এক জন বেরিয়ে কানের কাছে বন্দুক ধরল। আর সামনে এগোতে পারিনি।’’
একে তৃণমূল নেতা, ব্লকের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই খুনের পরে মাঠে নেমেছে তৃণমূল। রাতেই তার বাড়িতে পৌঁছয় ডোমকলের পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন। মঙ্গলবার দুপুরে আলতাফের বাড়িতে হাজির হন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান। তৃণমূলের দুই নেতার অভিযোগের আঙুল ছিল বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেসের দিকে। সৌমিকের দাবি, "সিপিএম-কংগ্রেস যৌথ ভাবে ডোমকলে আবার তাদের পুরনো সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে। খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। আমরা সেটা হতে দেব না।’’ এ দিন দুপুরে আলতাফের বাড়িতে দাঁড়িয়ে একই অভিযোগ তুলেছেন আবু তাহেরও। আরও একধাপ এগিয়ে তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের দলের কর্মী সেজে বিরোধী দলের কেউ আমাদের দক্ষ নেতাকে খুন করবে সেটা আমরা মেনে নেব না।’’ যদিও পুলিশ এই খুন নিয়ে এখনও ধন্ধে আছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, আলতাফের বিরুদ্ধে একাধিক খুনের মামলা ও মাদক পাচারের মামলা ছিল। একটি মাদকের মামলায় সে বছর দুয়েক জেলেও খেটেছে। সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy