Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রুজিতে টান, ক্ষত টাটকা

গত পাঁচ বছরে নানা ঘটনায় প্রগাঢ় ছাপ পড়েছে জনজীবনে। কখনও খুশি, কখনও ক্ষোভ, কখনও আশঙ্কা দুলিয়ে দিয়েছে দেশকে। ভোটের মুখে কতটা ফিকে সেই সব ছবি, কতটাই বা রয়ে গিয়েছে পুরনো ক্ষতের মতো? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১৭
Share: Save:

কয়েক মাস আগের কথা। সবে দুর্গাপুজোর বাজার জমেছে। কলকাতায় পুজোর শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন শান্তিপুরের তাঁত ব্যবসায়ীরা। একটি গাড়িভাড়া করে কয়েক জন ব্যবসায়ী মিলে কাপড় নিয়ে কলকাতায় যাওয়া এখানে প্রচলিত ব্যাপার। এতে যাতায়াতের ধকল এবং খরচ দুই কমে। সে দিন ব্যবসায়ীদের গন্তব্য ছিল কলকাতার খান্না এলাকার হরি সাহার হাট। কিন্তু কাপড়-সমেত গাড়ি হাটে দাঁড়াতেই বিপত্তি। অভিযোগ, মুহূর্তে পুলিশ ঘিরে ফেলে গাড়ি-সহ ব্যবসায়ীদের। জানায়, ওই ব্যবসায়ীদের গাড়ি বোঝাই মালের ‘জিএসটি’ দেওয়া নেই, নেই ‘ওয়ে বিল’ যা জিএসটি-পূর্ব জমানায় ‘রোড চালান’ নামে পরিচিত ছিল। সুতরাং ওই প্রচুর কাপড়-সমেত গাড়ি আটক করা হয়। চোখে অন্ধকার দেখেন ব্যবসায়ীরা।

পুজোর ব্যবসা মাথায় উঠল। জট কাটার কোনও লক্ষণ না-দেখে আসরে নামল ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ ট্রেডার্স অর্গানাইজেশন’। সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি তারক দাস ব্যবসায়ীদের নিয়ে ছুটলেন জিএসটি দফতরের কমিশনারের কাছে। তাঁকে জানালেন, একাধিক ব্যবসায়ীর কাপড় গাড়িতে ছিল। হাটে সব কাপড় বিক্রি হবে তা নয়। অবিক্রিত কাপড় ফেরত নিয়ে আসবেন ব্যবসায়ীরা। যা বিক্রি হয়নি তার জিএসটি বিল কী ভাবে হবে?

সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তারকবাবু বলেন, “ওঁরা ‘ওয়ে বিল’ দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা দেখানো যায়নি তার কারণ, ওয়ে বিল তখনই হয় যখন পণ্য নির্দিষ্ট কারও কাছে যায়। কিন্তু হাটে তো কোনও এক জনের কাছে সব কাপড় বিক্রি হয় না। ফলে কার নামে ওয়ে বিল হবে? বিষয়টি বুঝে কমিশনার গাড়ি ছেড়ে দেন। মৌখিক ভাবে প্রতিশ্রুতি দেন যে, ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হবে না। তত দিনে দু’ দিন কেটে গিয়েছে। পুজোর মুখে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ব্যবসায়ীদের।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

জিএসটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের এমনই বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে দু’বছরের বেশি সময় ধরে চলছেন ব্যবসায়ীরা। নদিয়ার ছোট থেকে মাঝারি ব্যবসায়ীরা জিএসটি ধাক্কায় কার্যত ধ্বস্ত। অনেককে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ভোটের মুখে জিএসটির ক্ষতে ফের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। নদিয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “জিএসটি ছোট ব্যবসায়ীকে ধুয়েমুছে দিয়েছে আর মাঝারি ব্যবসায়ীকে প্রান্তিক করে তুলেছে। এক কথায় এই হল জিএসটি থেকে আমাদের প্রাপ্তি।” নবদ্বীপে এক সময় মোট ৩৭টি সুতোর দোকান ছিল। জিএসটি চালু হওয়ার দু’বছরের মধ্যে দোকানের সংখ্যা কমে হয়েছে চার। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সুতো ব্যবসায়ীদের রেজিস্ট্রাড সংগঠন। কয়েক শো মানুষের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে রুটিরুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE