প্রতীকী ছবি।
টিন আর খড়ের ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা ঘর। তার মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তিনতলা ‘ফ্লাড সেন্টার’। ওই বাড়ির ছাদে উঠলে দূরে দেখা যায়, বাংলাদেশের লাদেনের চরও। আর মূল পদ্মার পাড়ের ঘন সবুজ।
চৈত্রের নিস্তব্ধ দুপুর। লাদেনের চরের দিক থেকে জলঙ্গির চর পলাশপুর ও উদয়নগর খণ্ডে ভেসে আসছিল ঠান্ডা হাওয়া। কাঁধের গামছায় মুখ মুছতে গিয়ে সেন্টারের ধুলোমেঝেটাও একবার মুছে নিলেন কাদের মোল্লা।
ভোটের হাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করতেই রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "আমাহারে আর কেডা আছে! আপনারাও তো সেই লেতাদের মুতন শুধু ভোটের সময় আসেন চরে। বিএসএফ জওয়ানদের মর্জিমুতন চলতে হয়। যেটুকুন চাষ আছে তাথেও বাংলাদেশীদের অত্যাচার। ভোটটা আইলে বসন্তের কোকিলডার মুতন লেতাধের পা পড়ে চরে। আর শুরু হয়, অমুক করব তমুক করব।"
একদিকে পদ্মার শাখা নদী। অন্যদিকে সীমান্তের সাদা পিলার। মাঝের চরে বসবাস মেরেকেটে হাজার দেড়েক পরিবারের। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এই এলাকার উন্নয়নের বিস্তর ফারাক। নেই বিদ্যুৎ। রাস্তা। পানীয় জলের ব্যবস্থা। রোগবালাইয়ে ভরসা গ্রামের হাতুড়ে আর বিএসএফের ট্রাক্টর। নুন থেকে তেল আনতেও ভোটার কার্ড সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হয়। বিএসএফের জওয়ানদের কার্ড দেখিয়ে তবেই রেহাই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জাবদুল মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী বলছিন, ‘‘নামেই আমরা দেশের নাগরিক। দেশের কোনও পরিষেবা নদী আর চর পেরিয়ে আসে না এখানে। দু’বেলা চোখরাঙানি আর গালাগালি পাওনা আমাদের।’’
চরের সাদা বালিতে যেখানে নীল আকাশ গিয়ে মিশেছে, সেদিকে তাকিয়ে উদাস হয়ে পড়লেন বছর পঁয়তাল্লিশের মিজানুর। চরের মাটিও কি এবার নীল-সাদার দখলে? তিনি বললেন, ‘‘আরে এখন তো সবই নীল-সাদা। তবে আমাদেরও অনেক আশা ছিল। কিছু পূরণ হয়েছে। কিন্তু অনেক কিছুই তো হল না!’’
চরের আলপথের পাশে ছোট্ট চায়ের দোকান। লাঠি ধরে কাঁপতে কাঁপতে সেখানে এসে বসলেন ৮০ ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ। কাঁপা গলায় বললেন, "দ্যাশ স্বাধীন হতেও দেখেছি আবার আমধের গ্রামকে পরাধীন হতেও দেখলাম। কত লোকই তো চরে এসে উন্নয়নের কথা বললেন। কই কিছুই তো হল না!’’ প্রায় সব গ্রামবাসীরও এক সুর। তাঁদের কথায়, সরকার আসে সরকার যায়। কিন্তু উন্নয়ন এক ফোঁটাও হয়নি চরে।
কেবল ভোটের দিন নয়। বারো মাস ছোট্ট কার্ড বুকে আগলে ঘুরতে হয় চরের বাসিন্দাদের। জলঙ্গির চর পরাশপুর আর উদয়নগর খণ্ডের বাসিন্দাদের কাছে ওই কার্ডের মূল্য অনেক। ওটি হাতে না থাকলে এক লহমায় বাংলাদেশি তকমা জুটে যেতে পারে। তারপর কপালে নির্ঘাৎ জুটে যাবে মোটা লাঠির বাড়ি। কান ধরে চৈত্রের টানা রোদে দাঁড়িয়েও থাকতে হতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘আমাদের কাছে ভোটের কোনও গুরুত্ব নেই। জানি, সারা বছর ওই ভোটার কার্ডটাকেই অক্ষত রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy