Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কাঁটাতার মুছতেই ভোট দেয় বিষ্ণুগঞ্জ

তেহট্ট মহকুমায় যে দু’টি গ্রাম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে রয়েছে তার একটি হোগলবেড়িয়ার চরমেঘনা ও দ্বিতীয়টি তেহট্টের বিষ্ণুগঞ্জ। 

সাগর হালদার ও কল্লোল প্রামাণিক
তেহট্ট শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ১১:১৯
Share: Save:

আর পাঁচটা সীমান্ত-গ্রামের মতো স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের সুযোগ কোনও না কোনও দিন তাঁরা পাবেন এই অপেক্ষাতেই থাকেন বিষ্ণুগঞ্জের বাসিন্দারা। তেহট্টের কাঁটাতারের ও পারের গ্রাম বিষ্ণুগঞ্জে প্রায় পৌনে পাঁচশো বাসিন্দা। তেহট্ট মহকুমায় যে দু’টি গ্রাম ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে রয়েছে তার একটি হোগলবেড়িয়ার চরমেঘনা ও দ্বিতীয়টি তেহট্টের বিষ্ণুগঞ্জ।

বেতাই থেকে কাঁটাতার-ঘেঁষা সীমান্ত রাস্তা দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গেটে ভোটের পরিচয়পত্র জমা দিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনুমতি পাওয়ার পর বিষ্ণুগঞ্জে যাওয়া যায়। গ্রামের এক পাশে কাঁটাতারের বেড়া আর অন্য দিকে ৫০ মিটার দূরে বাংলাদেশের গ্রাম মেহেরপুরের বাজিতপুর। গ্রামের বাসিন্দা কামাল শেখ ও টুটুল মণ্ডলরা জানাচ্ছেন, দেশ ভাগের আগে থেকে বাপ-ঠাকুর্দা এই গ্রামে বসবাস করতেন। ২০০৩ সালে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সময় গ্রামের প্রায় ত্রিশটি পরিবার বেড়ার এ পারে চলে আসেন। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আজও প্রায় সত্তরটি পরিবার ও পারেই রয়ে গিয়েছে। কারণ, তাঁদের ভিটে মাটি সেখানে।

ভোটের দিন সারাদিন সীমান্তের গেট খোলা থাকে। গ্রামের মধ্যে আগে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। ২০০৪ সালে সেটি এ পারে বিষ্ণুগঞ্জ নতুন পাড়ায় চলে আসে। সেখানে বুথ হয়েছে। সোমবার কাঁটাতার পেরিয়ে সেখানে ভোট দিতে এসেছিলেন বিষ্ণুগঞ্জের প্রায় আড়াইশো জন ভোটার।

এমনিতে যে কোনও কাজে গ্রামের বাইরে আসা-যাওয়ার সময় ভোটার কার্ড জমা দিয়ে যেতে হয়। সকাল ৬-৩০ থেকে ৮-৩০, ১০-০০ থেকে ১২-৩০ ও বিকেলে ৩-৩০ থেকে ৫-৩০ পর্যন্ত বিএসএফ সীমান্তের গেট খোলা রাখে। তাঁদের অসংখ্য প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরে গ্রামে ঢোকার ছাড়পত্র মেলে। বাড়িতে কোনও আত্মীয়-বন্ধু এলেও তাঁদের এই নিয়ম মানতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ শেখের কথায়, “আমাদের গ্রামকে ভিতরে রেখে কাঁটাতারের বেড়া দিলে সব সমস্যা দূর হত। ভারত সরকারের কাছে আমাদের এটাই আবেদন যে সেটা করা হোক।” আর এক বাসিন্দা রোজিফা বিবি বলেন, “বাচ্চাদের প্রায় এক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। কোনওদিন স্কুলে আগে ছুটি হয়ে গেলেও গেট বন্ধ থাকে। ফলে খোলার জন্য ওদের বসে থাকতে হয়।” তাঁদের অভিযোগ, ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট মিটে যাওয়ার পর সমস্যার সমাধান হয় না। তবুও কাঁটাতারের সমস্যা সমাধানের আশায় প্রত্যেক বার ভোট দেয় বিষ্ণুগঞ্জ। নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE