তাপস পাল। ফাইল চিত্র
একই দিনে বিদায়ঘণ্টা বাজল জোড়া তাপসের। কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল এবং রানাঘাটের তাপস মণ্ডল কেউই এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হচ্ছেন না।
দু’বারের সাংসদ তাপস পাল যে এ বার আর টিকিট পাচ্ছেন না তা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। দ্বিতীয় দফায় সাংসদ হওয়ার পরে একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। কখনও নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, কখনও বিরোধীদের উদ্দেশে নানা উস্কানিমূলক কথা বলে বিতর্ক তৈরি করেছেন। তার পর থেকে কৃষ্ণনগরে আসাও কমে যায় তাঁর। দলের একাংশের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। এরই মধ্যে অর্থলগ্নি সংস্থা কাণ্ডে গ্রেফতার হন তাপস। সেই থেকেই আর সে ভাবে তাঁকে দলের কাজে দেখা যায়নি। তাঁর বদলে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রস্তাবিত তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে একাধিক নাম উঠে এসেছিল।
কিন্তু রানাঘাটের তৃণমূল সাংসদ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাপস মণ্ডলের টিকিট না পাওয়াটা অনেককে চমকে দিয়েছে। কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুন হওয়ার পরে তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর স্ত্রী রূপালী বিশ্বাসকে রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে সেটা যে একেবারে লোকসভা ভোটের প্রার্থী, তা প্রায় কেউই ভাবেননি। বরং মঙ্গলবার সকাল পর্যন্তও বিদায়ী সাংসদ তাপস মণ্ডলকেই ফের প্রার্থী করা হচ্ছে বলে জল্পনা ছিল। তবে রানাঘাটে জয়ী সাংসদকে প্রার্থী না করার ট্র্যাডিশন নতুন নয়। ২০০৯-এ বিদায়ী সাংসদ অলোকেশ দাসকে আর প্রার্থী করেনি সিপিএম। সেই বছরেই লক্ষাধিক ভোটে জেতেন তৃণমূলের সুচারুরঞ্জন হালদার। ২০১৪ সালে সেই সুচারুকে আর টিকিট দেয়নি তৃণমূল। সে বার দাঁড়িয়ে তাপস মণ্ডলের জয়ের মার্জিন বেড়ে দ্বিগুণ হয়। সুচারু পরে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর ছেলেও বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী ছিলেন। এ বার আবার টিকিট পেলেন না তাপস।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে দল তাপস মণ্ডলকে প্রার্থী না করায় বেশ বিস্মিত তৃণমূল কর্মীদের একটি বড় অংশ। দিন দুয়েক আগেও গাংনাপুরে একটি রক্তদান শিবিরে তাঁকে খোশমেজাজে দেখা গিয়েছে। কিন্তু তাঁকে প্রার্থী করা হল না কেন? সন্ধ্যায় তাপস বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। আমি লেখাপড়ার জগতের মানুষ। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়েই সময় দেব।”
তৃণমূলের অন্দরে অবশ্য কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। সত্যজিৎ খুনের পরে রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূলের মতুয়া নেতৃত্বে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষতি সামলে মতুয়া ভোট ধরে রাখতেই কি বিধায়কের স্ত্রীকে প্রার্থী করা জরুরি হয়ে উঠেছিল? আর তাঁকে জায়গা করে দিতেই কি সরে দাঁড়াতে হল তাপসকে? রানাঘাট লোকসভা এলাকায় দলের কোন্দলও মাথাব্যথার কারণ হয়েছ নেতৃত্বের। সাংসদ হিসাবে তাপস তা মেটাতে পারেননি এবং তা-ও তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে থাকতে পারে বলে মত একাংশের।
তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বিরোধী শিবিরের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তাপস। তারই খেসারত দিতে হল তাঁকে। সোমবার রাত পর্যন্তও তিনিই প্রার্থী হচ্ছেন বলে পাকা খবর ছিল। কিন্তু প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই জেলা থেকে কলকাতায় ফোন যায়। গৌরীশঙ্কর অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘এ সব বাজে কথা! দ্বন্দ্ব-টন্দ্ব কিছু নেই। এতে প্রমাণ হল, যাঁরা দলের জন্য রক্ত ঝরান, নেত্রী তাঁদের ভোলেন না। আর তাপস মণ্ডলকে পরে দলেরই অন্য কাজের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy