Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অকাল ঘুমেই বিপদের লক্ষণ

চোরা হিন্দুত্ব হাওয়া ছিল, তা উসকে দেওয়ার জন্য প্রচারও ছিল তুমুল। কিন্তু বহু জায়গাতেই হাওয়া নয়, বরং তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়তি জমি দিয়েছে বিরোধীদের। কেন এই ক্ষোভ? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল দীর্ঘদিনের। এক দিকে লক্ষ্মণ ঘোষ চৌধুরী আর অন্য দিকে প্রাক্তন দুই ব্লক সভাপতি প্রণব বিশ্বাস ও কল্যাণ চক্রবর্তী।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০০:৪৫
Share: Save:

তিন দফায় ১৪ বছরের ব্লক সভাপতি তিনি। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা ব্লক সভাপতির কুর্সি তাঁরই দখলে ছিল। কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা লক্ষণ ঘোষ চৌধুরীকে গোটা লোকসভা ভোটে দেখা গেল না ময়দানে। মাঠে দেখা যায়নি তাঁর অনুগামীদেরও। বরং দলেরই একটা অংশের দাবি, লক্ষ্মণ বসে থাকলেও তাঁর অনুগামীদের একটা অংশ ভোট করেছে বিজেপির হয়ে। আর তাতেই কপাল পুড়তে পারে রূপালী বিশ্বাসের।

কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল দীর্ঘদিনের। এক দিকে লক্ষ্মণ ঘোষ চৌধুরী আর অন্য দিকে প্রাক্তন দুই ব্লক সভাপতি প্রণব বিশ্বাস ও কল্যাণ চক্রবর্তী। যার জেরে বারবার বিব্রত হতে হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে উপ-নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়ে সত্যজিৎ বিশ্বাস এলাকার সাংগঠনিক রাশ একটু-একটু করে নিজের হাতে নিতে শুরু করেন। ফলে লক্ষ্মণের সঙ্গে ভিতরে-ভিতরে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে তাঁর, পঞ্চায়েত ভোটের পরে যা চরম আকার নেয়।

গত পঞ্চায়েত ভোটে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে লক্ষ্মণের নেতৃত্বে লড়াই করেছিল তৃণমূল। প্রণব বিশ্বাস বা কল্যাণ চক্রবর্তীরা সেখানে কল্কে না পেয়ে অনুগামীদের ‘নির্দল প্রার্থী’ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেন বলে অভিযোগ। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, নির্দলেরা যথেষ্ট ভোট টেনেছেন। দলের ভিতরে চাপের মুখে পড়ে যান লক্ষ্মণ। তা ছাড় পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতে সভাপতি হওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি। দুইয়ে মিলিয়ে তিনি দলের ব্লক সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়ায় তাঁর আর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হওয়া হয়নি। তখন তিনি ফের দলের ব্লক সভাপতি হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ বার বেঁকে বসেন সত্যজিৎ। কোনও ভাবেই লক্ষ্মণকে সভাপতি হিসাবে মেনে নেবেন না বলে তিনি দলের জেলা নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এরই মধ্যে প্রশাসনিক বৈঠকের ফাঁকে কৃষ্ণনগরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মণকে আবার ব্লক সভাপতি করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশও মানতে রাজি ছিলেন না সত্যজিৎ। তিনি রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এ নিয়ে দরবারও করেন। ফলে আটকে থাকে লক্ষ্মণের চতুর্থ বার ব্লক সভাপতি হওয়া। এখনও পর্যন্ত ওই পদ ফাঁকাই পড়ে আছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এর পরেই দলের সমস্ত কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন লক্ষ্মণ। কোনও ভাবেই তাঁকে লোকসভা ভোটে সক্রিয় করতে পারেনি দল। জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত তাঁর বাড়িতে গিয়ে কথা বলেও রাজি করাতে পারেননি। এ বার তাই লক্ষ্মণকে বাদ দিয়েই ভোট করিয়েছেন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর প্রণব বিশ্বাস, কল্যাণ চক্রবর্তীরা।

কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে স্থানীয় স্তরে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সে ভাবে বড়সড় আকারে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তবে পুলিশ-প্রশাসনের রাশ নিজেদের হাতে রেখে দেওয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের উপরে নিজেদের মতামত জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে দলের ভিতরেও ক্ষোভ আছে। লক্ষ্মণ নিজে অবশ্য দাবি করছেন, “আমি সততার সঙ্গে দল চালিয়েছি। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিইনি। তাই অনেকে আমাকে পছন্দ করে না।” কিন্তু তা বলে এত বড় ভোটে আপনি ঘরে বসে থাকবেন? লক্ষ্মণের কথায় অভিমান, “দলের নেতারা আমার মূল্যায়ন করলেন না। দলনেত্রী বলার পরেও আমাকে ব্লক সভাপতির পদ ফিরিয়ে দিল না। সেই কারণেই আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।”

সে নিন। কিন্তু কোনও কারণে যদি শেষ পর্যন্ত রূপালী হেরে যান বা এই ব্লক থেকে লিড না পান, তার দায় আপনার উপরে বর্তাবে না? লক্ষ্মণ পাল্টা বলেন, “কেন বর্তাবে? আমি তো বিরোধিতা করিনি। আমি শুধু বসে থেকেছি। যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে ভোট করেছেন, তাঁরাই দায়ী থাকবেন।” প্রাক্তন ব্লক সভাপতি প্রণব বিশ্বাস পাল্টা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, সবাই মিলে লড়াই করুক। একাধিক বার লক্ষ্মণবাবুকে মাঠে নামতে অনুরোধও করা হয়েছিল। তবে আর কাউকে নয়, আমাদের নেত্রীকে দেখেই ভোট দেয় মানুষ।’’

অনেকেই মনে করছেন, ভোটের সময়ে ঘরে বসে থেকে লক্ষ্মণ আসলে নিজের ওজনটা দেখিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু এই ক্ষোভের বাজারে যে দলের ওজনও কমে যেতে পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE