Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জট কাটেনি, মকুটের আজ মনোনয়ন?

কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার এক বিজেপি কর্মীর কথায়, “বিষয়টা মানতে কষ্ট হচ্ছে। কেবলই মনে হচ্ছে, ঘটনাটার পিছনে অন্য কোনও গল্প নেই তো?”

ধোঁয়াশা সত্ত্বেও চলছে দেওয়াল লিখন। রবিবার শান্তিপুরে। নিজস্ব চিত্র

ধোঁয়াশা সত্ত্বেও চলছে দেওয়াল লিখন। রবিবার শান্তিপুরে। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার ও সম্রাট চন্দ
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

সেনারা প্রস্তুত। অথচ কার জন্য তারা যুদ্ধ করবে, তারই কোনও স্থিরতা নেই। দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় হাতে আর মোটে দু’দিন। প্রচারের সময় ফুরিয়ে আসছে।

স্বাভাবিক ভাবেই চূড়ান্ত হতাশ রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি কর্মীরা। এখন দলের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠছে, সরকারি কর্মচারিদের জন্য ধার্য ‘সার্ভিস রুল’ কি নেতারা সত্যিই জানতেন না? যদি জেনেই থাকেন, তবে মুকুটমণি অধিকারী সরকারি হাসপাতাল থেকে ইস্তফা দিতে গেলে যে নিয়মে বাধতে পারে, তা তাঁদের চোখে পড়ল না কেন? বিশেষ করে যেখানে তৃণমূল সরকারের পক্ষে ইস্তফা নাকচ করার সম্ভবনা প্রবল? কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার এক বিজেপি কর্মীর কথায়, “বিষয়টা মানতে কষ্ট হচ্ছে। কেবলই মনে হচ্ছে, ঘটনাটার পিছনে অন্য কোনও গল্প নেই তো?” আর ঠিক এই জায়গাতেই নতুন করে আশার আলো দেখছেন বামকর্মীরা।

দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে শেষ পর্যন্ত রানাঘাটে মুকুটমণির নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। তত দিনে সিপিএম ও তৃণমূল প্রার্থী এলাকা চষে ফেলতে শুরু করেছেন। তার পরে যা-ও বা তরুণ চিকিৎসকের নাম ঘোষণা করা হল, পাঁচ বছর চাকরি না হওয়ায় তাঁর ইস্তফা নামঞ্জুর করল রাজ্য সরকার। অথচ ইস্তফা না দিয়ে কোনও সরকারি কর্মীর পক্ষে ভোটে লড়া সম্ভবও নয়।

বিজেপি নেতারা আপাতত বলে চলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি দেখছেন। আজ, সোমবার মুকুটমণি মনোনয়ন দাখিল করতে পারেন। রাতে তিনি দাবি করেন, ‘‘জট অনেকটাই কেটে গিয়েছে। একই দাবি করেছেন বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারও। নিয়ম বলছে, এমনি মনোনয়ন তিনি দিতেই পারেন, তবে ইস্তফা নিয়ে জট না কাটলে পরে স্ক্রুটিনিতে আটকাবে। তাতে প্রার্থী হওয়া কেঁচে যাবে। তার আগে জট কাটাতে পারলে তবেই বাঁচোয়া। অন্যথায় মুকুটমণির নামে যে সব দেওয়াল লেখা হয়ে গিয়েছে, সে সব মুছতে হবে। তাঁর বদলে কোনও নতুন প্রার্থীকে এলাকায় পরিচয় করাতে হবে। কর্মীদের প্রশ্ন, এত সব কি এই ক’দিনে সম্ভব? তবে মুকুটমণিই যদি শেষমেশ প্রার্থী থেকে যান, মাঝের এই দিনগুলো শুধু-শুধু ঘরে‌ বসে নষ্ট হল, কেননা এই গোলমাের জেরে দলের সিদ্ধান্তে প্রচার স্থগিত রাখা হয়েছে। টুকটাক দেওয়াল লেখা অবশ্য এ দিনও হয়েছে।

এ বার রানাঘাটে এমনিতেই লড়াই কঠিন। সিপিএম প্রার্থী রমা বিশ্বাস লড়াকু নেত্রী বলে পরিচিত। গত বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁকে কেউ ধর্ব্যের মধ্যে রাখেননি। কিন্তু শেষ হাসি হেসে তিনিই এখন জেলার এক মাত্র বাম বিধায়ক। তাঁকে প্রার্থী পেয়ে কর্মীরাও যথেষ্ট উজ্জীবিত। একেবারে তৃণমূল স্তরে ছোট-ছোট সভা করে তাঁরা সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিজেপির ফাঁকা ফেলে রাখা জমিতে চাষ করার কোনও সুযোগ তাঁরা ছাড়ছেন না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে অবশ্য দাবি করছেন, “আমরা তো লড়াইয়ে আছিই। বরং তৃণমূলকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্যই এই নাটক করছে বিজেপি।”

সিপিএম নেতারা মুখে যা-ই বলুন, ছবিটা পরিষ্কার। রানাঘাট কেন্দ্রে এর আগে কোনও দিন বিজেপির এতটা সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। সেই জায়গায় প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের এই ‘ব্যর্থতা’ আসলে ‘ওয়াক ওভার’ দেওয়া বলে সন্দেহ করছেন দলেরই অনেকে। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার অবশ্য দাবি করেন, “কে বলেছে আমাদের প্রার্থী নেই। আমাদের প্রার্থী তো নরেন্দ্র মোদী! প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো প্রার্থী আর কার আছে? প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর আসনে ফেরাতে আমাদের কর্মীরা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।”

তার মানে কি রানাঘাট কেন্দ্র না জিতলেও চলবে? জেলা বিজেপির কর্মীরা কি তবে বারাণসী কেন্দ্রের জন্য প্রচারে ‘ঝাঁপিয়ে পড়েছেন’?

তবে সব প্রশ্নের উত্তর হয় না, কে না জানে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Ranaghat BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE