Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গাংনাপুরে বিস্ফোরণের পর তদন্তে মিলল চকলেট বোম

শুধু আলোর বাজি তৈরির অনুমতি ছিল গাংনাপুরের কারখানায়। কিন্তু বিস্ফোরণের পর দিন তদন্তে এসে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞারা পোড়া কারখানা ভিতর ছড়ানো প্রচুর চকলেট বোমার খাপ পেলেন!

সংগ্রহ করা হচ্ছে বোমার মশলা। নিজস্ব চিত্র

সংগ্রহ করা হচ্ছে বোমার মশলা। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৬
Share: Save:

শুধু আলোর বাজি তৈরির অনুমতি ছিল গাংনাপুরের কারখানায়। কিন্তু বিস্ফোরণের পর দিন তদন্তে এসে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞারা পোড়া কারখানা ভিতর ছড়ানো প্রচুর চকলেট বোমার খাপ পেলেন!

এর থেকেই প্রমাণিত হয়েছে, অবৈধ ভাবে নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি হত ওই কারখানায়। এবং ওই বাজি তৈরির জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তার কিছুই কারখানায় ছিল না। আশপাশে ঘেঁষাঘেঁষি করে ছিল বসতবাড়ি। যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। আগুন লাগার পর গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে তা আরও ভয়াবহ আকার নেয়। কী ভাবে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে এখানে শব্দবাজি তৈরি হচ্ছিল এবং কেন প্রশাসনিক কর্তারা নিয়মিত তল্লাশির মাধ্যমে তা আটকাননি সেই প্রশ্ন এখন উঠছে।

সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দেবাশিস সাহার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি তাঁরা সেখানে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কল্যাণীর অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার তৌসিফ আলি আজহার ও রানাঘাটের এসডিপিও লাল্টু সরকার। প্রথমে তাঁরা খোলা যায়গা, ভাঙা বাড়ি পরিদর্শন করেন। কার পর পাকাবাড়িতে ঢোকেন এবং বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। একটি ঘরের দরজা বিস্ফোরণে ভেঙে আটকে গিয়েছিল। জানলা দিয়ে সেই ঘরে ঢোকেন তদন্তকারীরা। নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি বেশ কিছু ছবিও তোলা হয়েছে। শেষে বাইরে এসে একটি বড় গর্ত দেখে তাঁরা থমকে যান। নিজেদের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষণ আলোচনার পর সেই গর্ত থেকে বালির মশলা, টিনের টুকরো-সহ বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করেন। কোদাল দিয়ে ওই গর্তের চার পাশ থেকে নমুনা তোলেন তাঁরা।

প্রাথমিক ভাবে তদন্তে তাঁরা কী পেলেন তা খোলাখুলি বলতে চাননি ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, “কী কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। এলাকা পরিদর্শন করে গেলাম। নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছি। ল্যাবরেটরিতে সেগুলো পরীক্ষা করলে অনেক কিছু বোঝা যাবে।” তবে ফরেন্সিক বিভাগ সূত্রের খবর, বিড়ি বা সিগারেট থেকে বাজির মশলায় আগুন লেগেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে গাংনাপুরের বাজি কারখানা থেকে তিন কিলোমিটার দুরের এলাকার মানুষও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। ওই ঘটনায় কারখানার মালিক মিঠু মণ্ডল এবং সেখানকার কর্মী রঞ্জিত বিশ্বাস মারা গিয়েছেন। রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী মঞ্জু বিশ্বাস বলেন, “ওই দিন সকাল এগারোটা নাগাদ কারখানায় গিয়েছিল। দুপুরে বাড়ি আসেনি। আড়াইটে নাগাদ বিকট শব্দ শুনতে পাই। শোনার পর থেকেই ভয়ভয় করছিল। তার পরেই সবাই এসে খবর দেয় স্বামী মারা গিয়েছে।”

ঘটনার পরে এলাকার অন্য বাজি কারখানাগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কারখানায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকেও শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। এলাকার মানুষ জানিয়েছে, প্রথম থেকে পুলিশ-প্রশাসন এই তৎপরতা দেখালে শব্দবাজি তৈরি আটকানো যেত। তাতে হয়তো বিস্ফোরণের মাত্রাও কম হত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE