Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Madrasa Exam

এগিয়ে রইল সেই কন্যারাই

দারিদ্র, বাল্য বিবাহ, পাচারের মতো ঘটনার জেরে মেয়েরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছিল মুর্শিদাবাদে।

পরীক্ষার প্রস্তুতি। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

পরীক্ষার প্রস্তুতি। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ফের এগিয়ে থাকল মেয়েরা। আজ, সোমবার থেকে রাজ্য জুড়ে মাদ্রাসা পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ছাত্রদের অনেক পিছনে ফেলে জেলার মেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এ বারও অনেক বেশি। শিক্ষা দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বার হাইমাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল (উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য) পরীক্ষায় মুর্শিদাবাদের মোট পরীক্ষার্থী ১৬ হাজার ৬২৯ জন। তার মধ্যে, ১১,৯৬৭ জন পরীক্ষার্থী ছাত্রী। তুলনায় মাত্র ৪,৬৬২ জন ছাত্র পরীক্ষা দিচ্ছে। শতাংশের হিসেবে ৭১.৯৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী মেয়ে এবং ৩১.০৪ শতাংশ ছেলে পরীক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এ বার ২ শতাংশ বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় জেলায় মাদ্রাসা পরীক্ষার্থী কমেছে ৬১১ জন। জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মাদ্রাসা পরীক্ষার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত বছরের মতো এ বছর মাদ্রাসা পরীক্ষায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।’’

দারিদ্র, বাল্য বিবাহ, পাচারের মতো ঘটনার জেরে মেয়েরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছিল এ জেলায়। এক সময় অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হওয়াটাই ছিল রেওয়াজ। ফলে মেয়েরা মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হত। আবার পাচারের মতো ঘটনাও ঘটেছে আকছার। কিন্তু এ সবের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছিল। হালে পরিবারের লোকজনও যে মেয়েদের স্বাধীনতা এবং শিক্ষার প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন, পরীক্ষার্থীর এমন বিপুল সংখ্যা বৃদ্ধি তারই প্রমাণ। যার জেরে মেয়েদের স্কুলে আসার আগ্রহ বেড়েছে। অন্য দিকে, রাজ্য সরকারও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে একাধিক কর্মসুচি নিয়েছে। বিশেষ করে কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর মতো প্রকল্প মেয়েদের স্কুলে আসার ক্ষেত্রে আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও বাল্য বিবাহের কথা শুনলে ছুটে গিয়ে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছে। যার জেরে মেয়েদের বিদ্যালয়মুখী হওয়া বেড়েছে। উল্টো দিকে, দুঃস্থ পরিবারের ছেলেদের পড়া যে মাঝপথেই থমকে যাচ্ছে তার উদাহরণও জেলা জুড়ে। রোজগারের টানে পড়াশোনা ছেড়ে দিনমজুরি, রাজমিস্ত্রির কাজে ভিড়ে যেতে হচ্ছে অনেককেই। ফলে মাঝপথেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দেওয়ায় পরিণতিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।

লালগোলার আইসিআর হাইমাদ্রাসা থেকে এ বারে ৪৫২ জন মাদ্রাসা পরীক্ষা দিচ্ছে। তার মধ্যে ৩১৬ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী। ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আব্দুর রউফ সিদ্দিকি বলছেন, ‘‘কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে মেয়েদের স্কুলে আসার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এ ছাড়া অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেকে কমেছে। যার জেরে মেয়েদের সার্বিকভাবে পড়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ বেড়ে গিয়েছে।’’

হরিহরপাড়ার হাজি আলম বক্স সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে এবারে ৯২ জন মাদ্রাসা পরীক্ষা দিচ্ছে। তার মধ্যে ৫২ জন পরীক্ষার্থী মেয়ে। ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক মল্লিক বলছেন, ‘‘ছেলে পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ পড়াশোনা চলাকলীন কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যাচ্ছে। পরীক্ষা আর দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পও অনেকটা সাহায্য করছে মেয়েদের স্কুলে আসার ক্ষেত্রে।’’ জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে হাইমাদ্রাসা, আলিম, ফাজিল পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। বেলা ১১.৪৫ থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত পরীক্ষা হবে। জেলার ৩১টি পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে মহকুমাশাসকেরা ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madrasa Exam Murshidabad Girl Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE