প্রতীকী ছবি।
বেশ কয়েক মাস আগে শহরের কয়েক জন মিলে ফেসবুকে একটি গ্রুপ বানিয়েছিলেন। সেখানে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হত। এরই মধ্যে উঠে আসে ঋতুকালীন সময়ে মেয়েদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত নানা আলোচনা। স্বাভাবিক ভাবেই এসেছে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রসঙ্গ। সেখানে দেখা যায়, গ্রামীণ মহিলাদের একাংশের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করার প্রবণতা রয়েছে। টাকার কারণ ছাড়াও অনেক সময়ে স্রেফ সচেতনতার অভাবে তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকেন। আলোচনা তখনই আর ফেসবুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক সৌপন্য বসু, সুমন আইচেরা স্থির করেন সকলে মিলে এই বিষয়ে প্রচার করতে হবে।
এর পরেই ওই গ্রুপের সদস্যেরা স্থির করেন কল্যাণী শহরের অদূরের কোনও একটি গ্রামে গিয়ে তাঁরা মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বোঝাবেন। সঙ্গে চাঁদা তুলে ন্যাপকিন বিলি করবেন। দিন কয়েক আগে ওই গ্রুপের জনা দশেক সদস্য শহরের অদূরে শহরপল্লিতে যান। কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের ওই এলাকা বেশ অনুন্নত। সেখানে গিয়ে তাঁরা মহিলাদের ঋতুকালীন সুরক্ষা নিয়ে প্রচার করেন। ওই মহিলাদের বোঝান, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে ঋতুকালীন সময়ে পরিচ্ছন্নতার অভাবে শরীরের অভ্যন্তরে নানা রকমের সংক্রমণ হতে পারে। সেই সংক্রমণ অনেক ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হতে পারে।
রাজশ্রীরা স্থির করেন, ওই মহিলাদের বিনামূল্যে ন্যাপকিন বিলি করা হবে। সেই মতো শনিবার বিকেলে ওই গ্রুপের একাধিক সদস্য শহরপল্লি এলাকায় পৌঁছন। মহিলাদের মধ্যে ন্যাপকিন বিলি করা হয়। এ দিন শতাধিক মহিলাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ন্যাপকিন বিলি করা হয়।
ওই মহিলাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে যে বিভিন্ন সমস্যা হয়, তা তাঁরা জানতেন না। এর পর থেকে তাঁরা আর এই ভুল করবেন না।
এ দিন রাজশ্রী বলেন, ‘‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে জ্বর, তলপেটে ব্যথা ও মূত্রনালিতে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। এছাড়া জরায়ুতেও সংক্রমণ হতে পারে। এক নাগাড়ে সংক্রমণ হতে থাকলে তা জরায়ু ক্যানসারেও পরিণত হতে পারে।’’
ওই গ্রুপের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গ্রামের বহু মহিলা ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা বা ‘মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন’ সম্পর্কে অবগত নন। তাই ফেসবুক গ্রুপের কয়েক জন বন্ধু মিলে তাঁদেরকে সচেতন করার কাজ শুরু হয়েছে। সঙ্গে ন্যাপকিন বিলিও চলছে। কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের পঙ্কজ সিংহ বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের মাধ্যমেও মহিলাদের এই বিষয়ে সচেতন করা হয়। তবে নানা কাজের মধ্যে সে কাজ পুরোপুরি করা যায় না। কল্যাণী শহরের কিছু মহিলা যে ভাবে এলাকায় এসে গ্রামীণ মহিলাদের সচেতন করছেন, এটা ভাল উদ্যোগ। প্রয়োজনে পঞ্চায়েতও ওঁদের সঙ্গে কাজ করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy