ছোটবেলা থেকে নিজের বিয়ের স্বপ্ন দেখত মেয়েটি। বাকি সকলের মতোই লাল বেনারসি, আলতা-চন্দন আর অনেক মানুষের হই-হট্টগোলের দৃশ্য কল্পনা করত মনে মনে। তবে সে ভিড় নিছক আনন্দ করা বা বিয়েবাড়ির ভোজনের জন্য নয়, মানুষের জন্য কোনও কাজে লাগার!
সে স্বপ্নকে বাস্তব করলেন তেহট্টের বাজারপাড়ার মেয়ে সৌমিতা মণ্ডল। মা-বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে জেদ ধরেছিলেন বিয়ের দিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে হবে। মেয়ের আবদার রাখতে পেরে খুশি মা-বাবাও। এদিনের রক্তদান শিবিরে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী মিলে মোট চল্লিশজন রক্তদান করেন। জাঁকজমক করে অনুষ্ঠানের চেয়ে একজন মুমূর্ষুকে রক্ত দিয়ে জীবনে ফেরানো অনেক বেশি জরুরি মনে হয়েছিল সৌমিতার— ‘‘ছোট থেকেই জেনেছি, রক্ত মানুষের জীবনে কতটা প্রয়োজন। ওঁরা যেভাবে আমার ইচ্ছেপূরণ করলেন, তাতে আমি অভিভূত!’’ রক্তদান পর্ব শেষ হলে বিয়ের অন্যান্য ক্রিয়া শুরু করা হয়।
সিদ্ধেশ্বরীতলা ইনস্টিটিউশনের অঙ্কের শিক্ষক সুবিনয় মণ্ডলের মেয়ে সৌমিতা বি টেক ইঞ্জিনিয়ার। সুবিনয়বাবু এলাকার সমাজসেবী হিসাবে পরিচিত। সৌমিতার মা একজন স্বাস্থ্যকর্মী। সুবিনয়বাবু বলেন, “কয়েকদিন আগে সোদপুরের অর্পণ হাজরার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক হয়। তারপরেই মেয়ে আবদার করে, এই বিয়েতে সে সোনার গয়না বা যৌতুকসামগ্রী কিছুই চাই না। বরং বিয়ে উপলক্ষে যেন রক্তদান শিবির করি।’’ নিজে একজন রেডক্রস সোসাইটির সদস্য হয়ে মেয়ের এমন দাবি ফেলতে পারেননি তিনি। এই শুভক্ষণের সাক্ষী থাকলেন তেহট্টের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ।
এ দিন রক্তদান করে সৌমিতার বান্ধবী অনুশ্রী বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন মহাযজ্ঞে শামিল না হতে না পারলে অনেক কিছু হারাতাম।’’ আর সৌমিতা বলছেন, ‘‘সোনার অলংকারের থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো আমার কাছে অনেক দামী উপহার!’’
‘‘সোনার হাতে সোনার কাঁকন, কে কার অলংকার?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy