Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কল্যাণী থেকে শান্তিপুর

পাখিদের ফেরাতে সবুজ ছড়াচ্ছেন ডাক্তারি ছাত্র

বছরের প্রথম দিনটা হুল্লোড় করে কাটানোর আমন্ত্রণ এসেছিল বন্ধুদের থেকে। যাননি। উল্টে পাখিদের টানে, পরিবেশের টানে হাঁটলেন প্রায় ৫০ কিলোমিটার। কল্যাণী থেকে শান্তিপুর।

পরিবেশপ্রেমী:  সচেতনতায় পথে মুনমুন কীর্তনিয়া ও রাহুলদেব বিশ্বাস। নিজস্ব  চিত্র

পরিবেশপ্রেমী:  সচেতনতায় পথে মুনমুন কীর্তনিয়া ও রাহুলদেব বিশ্বাস। নিজস্ব  চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

বছরের প্রথম দিনটা হুল্লোড় করে কাটানোর আমন্ত্রণ এসেছিল বন্ধুদের থেকে। যাননি। উল্টে পাখিদের টানে, পরিবেশের টানে হাঁটলেন প্রায় ৫০ কিলোমিটার। কল্যাণী থেকে শান্তিপুর।

সেই সঙ্গে সবুজের আশায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে ছড়িয়ে দিলেন পেঁপের বীজ। আর যে দোকানিকে মাটির ভাঁড়ে চা ঢালতে দেখলেন তাঁকে উপহার দিলেন লাউ বীজ। এ ভাবেই নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফাইলান ইয়ারের ছাত্র রাহুল দেব বিশ্বাস। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায়। এর আগে যশোহররোডের দু’পাশে গাছ কাটার প্রতিবাদে ৫৩ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন তিনি। এ বার কল্যাণী থেকে শান্তিপুর। ১৯ ফেব্রুয়ারি টাইগার হিল থেকে হাঁটা শুরু করবেন অন্য পরিবেশপ্রেমীদের সঙ্গে। হাঁটবেন হাজার কিলোমিটার। সাগরদ্বীপ পর্যন্ত। মানুষকে পরিবেশ সচেতন করতে। এ দিনের হাঁটার পিছনেও সেই একই উদ্দেশে বলে তাঁর দাবি। রাহুলের কথায়, তাঁর বন্ধুরা গিয়েছেন পিকনিক করতে। তাঁকেও বলেছিল সঙ্গ দিতে। কিন্তু তাঁর মনে হয়েছে, পিকনিকে যা হয় সবই পরিবেশের বিরুদ্ধে। রাতেই তিনি ভাবেন এই দিনটায় মানুষকে পরিবেশ নিয়ে সচেতন করবেন।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কিনে নেন পেঁপের বীজ। সেই সঙ্গে সংগ্রহে করে রাখা লাউ বীজ। সকাল হতে বেরিয়ে পড়েন কলেজের হস্টেল থেকে। একাই। পথের দু’ধারে পেঁপের বীজ ফেলতে ফেলতে চললেন শান্তিপুর। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী ও স্থানীয় এক পত্রিকার সদস্যেরা।

চলার পথে ঢুঁ মারেন চায়ের দোকানগুলিতে। যাঁরা প্লাস্টিকের কাপে চা বিক্রি করেন তাঁদের সেটির অপকারিতা নিয়ে বুঝিয়েছেন। আর যাঁরা মাটির ভাঁড় ব্যবহার করেন, কাচের গ্লাস ব্যবহার করেন তাঁদের হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেন লাউ বীজ। রাহুল বলেন, “ফি বছর দেশে পনেরো বিলিয়ন গাছ কাটা হয়। তার পরিবর্তে পোঁতা হয় মাত্র পাঁচ বিলিয়ন চারা। ভাবুন আমাদের সামনে কী ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে।”

গাছ, পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা যাতে বাড়ে, সে জন্য একাই বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। চলার পথে যাঁকে পেয়েছেন তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন বীজ। রাহুলের কথায়, “দেখলাম, রাস্তার দু’ধারে পেঁপে গাছটাই ভাল ফলবে। গাছ বড় হলে আমরা সবুজ পাব, পাখিরা পাবে ফল।” রাহুলের কাজে মুগ্ধ একাধিক পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শান্তিপুরের সঞ্জীব কাষ্ঠ। তিনি বলেন, “ওঁর পরিবেশ সচেতনতা দেখে মুগ্ধ। এতটা রাস্তা হাঁটল কেবল সবুজের জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE