Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রাজ্যে সপ্তম রৌনক

রান্নার শব্দেই ঘুম ভাঙত তার

রৌনক চক্রবর্তী। মাঝারি উচ্চতা চকচকে মুখ— রাজ্যের সপ্তম ছেলেটি জেলায় প্রথম।এক মাত্র ছেলের পড়াশোনার জন্য কান্দির পৈতৃক ভিটে ছেড়ে বহরমপুরে স্কুলের কাছাকাছি গোরাবাজারের বাগদানপাড়ায় দু’কামরার ছোট্ট ঘরটায় মা রানু চক্রবর্তীর সঙ্গে উঠে এসেছিল রৌনক।

সাফল্য: বন্ধুদের সঙ্গে রৌনক চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

সাফল্য: বন্ধুদের সঙ্গে রৌনক চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০১:৩৯
Share: Save:

তার ঘুমটা ভেঙে যেত তপ্ত কড়াইয়ে জল ঢালার সেই চিরন্তন শব্দটায়। রোজ। মা তার জন্য রান্না করছেন। তার পরেই আধো অন্ধকারে মায়ের স্কুল-পাড়ি। আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ছেলেকে নিয়ে বাংলা পড়াতে বসা।

গোরাবাজারের ভাড়া বাড়ির দেওয়ালে ঠেস দিয়ে ছেলেটা বিড় বিড় করছে, ‘‘মা না থাকলে পরীক্ষাটাই দেওয়া হত না!’’

রৌনক চক্রবর্তী। মাঝারি উচ্চতা চকচকে মুখ— রাজ্যের সপ্তম ছেলেটি জেলায় প্রথম।

এক মাত্র ছেলের পড়াশোনার জন্য কান্দির পৈতৃক ভিটে ছেড়ে বহরমপুরে স্কুলের কাছাকাছি গোরাবাজারের বাগদানপাড়ায় দু’কামরার ছোট্ট ঘরটায় মা রানু চক্রবর্তীর সঙ্গে উঠে এসেছিল রৌনক। বাবাও শিক্ষক, তবে, আমলাই ভালুইপাড়া হাইস্কুলের বিপুল চক্রবর্তী বাড়ি ছেড়ে অআসেননি। ছেলের পিছনে সর্বস্ব দিয়ে মা না পড়ে থাকলে? রৌনক আবার বলছে, ‘‘পরীক্ষায় বসতেই পারতাম না!’’

উচ্চমাধ্যমিকে ৪৮৩ নম্বর পেয়ে বহরমপুর গোরাবাজার আইসিআই স্কুলের ছেলেটি তাই সাফল্যের সবটুকুই উজার করে দিতে চায় মা’কে।

৪৮৩’র মধ্যে পাঁচটি লেটার তার। এমনকী মায়ের পড়ানো বাংলাতেও ৮৫ পেয়েছে সে। তার নম্বর— অঙ্কে ১০০। পদার্থবিদ্যায় ৯৯, রসায়নে ৯৬, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ৯৮।

মহাকাশ তাকে ডাকে। ছেলেটি বলে, ‘‘ছেলেবেলা থেকেই টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি আর ডিসকভারি চ্যানেলে মহাকাশ বিষয়ক কিছু দেখালেই ছুটে যেতাম। এক দিন মনে হল, আমি মহাকাশকে ভালবেসে ফেলেছি। তখন থেকেই ইচ্ছে বড় হয়ে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার।’’ এখন থেকেই ইসরোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সে।

ছ’টি বিষয়ে ছ’জন গৃহশিক্ষক এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত পড়াশোনা নিয়ে উৎসাহ দিলেও মা রাণুদেবী ছায়ার মতো আগলে রাখতেন ছেলেকে। এ দিকে ছেলের সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কুর কাণ্ডকারখানা যেমন প্রিয়, তেমনি কার্টুন চরিত্র ‘অগি’ অন্যতম প্রিয় চরিত্র। তাই ভাড়া বাড়িতে টিভি থাকলেও কেবল্ সংযোগ রাখেননি মা রাণুদেবী। রাণুদেবীর কথায়, ‘‘আমি সারা দিন বাড়িতে থাকি না। অগি দেখতে যা ভালবাসে। তাতে সারা দিন কার্টুন চ্যানেল খুলেই বসে থাকত।’’

সেটাই কি বাঁচিয়ে দিল তাকে?

রৌনক ফের বলে, ‘‘না, মা, টিভি দেখলেও নম্বর পেতাম হয়ত। কিন্তু মা না থাকলে শূন্য পেতাম’’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE