Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কথা কওয়া টিয়া চাই?

দেশি বনটিয়ার দাম পাঁচশো থেকে হাজার। পাহাড়ি টিয়ার দাম দেড় থেকে দু’হাজার। ময়নার দর অবশ্য ঠিক হয় খরিদ্দার দেখে। লোকটা কখনও দাম হাঁকে তিন হাজার, তো কখনও নেমে আসে আড়াই হাজারে। সকলেই তাকে ডাকে ‘পাখিদা’ বলে। তার আসল নাম কারও জানা নেই। কোথা থেকে যেন সে এসে উদয় হয়। বিক্রিবাটা সেরে খাঁচা উঠিয়ে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে চলেও  যায়।

খাঁচাবন্দি। নিজস্ব চিত্র

খাঁচাবন্দি। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

লোকটা প্রায়ই আসে। হাতে গোটা কয়েক ছোট ছোট খাঁচা। তার ভিতরে বনটিয়া, পাহাড়ি টিয়া। কোনওটায় আবার ময়না। যেমন সাইজ, তেমন দাম।

মানুষটা এসে বসে কালভার্টের উপরে। কী করে যেন খবর চলে যায় তাঁতিবাড়ির গ্রামে। ভিড় করে আসেন নানা বয়সের মানুষ। কেউ পাহাড়ি টিয়া কিনতে চাইছেন। কেউ দরদাম করছেন ময়নার। দাম শুনেই গুটিগুটি কেটে পড়ছেন কেউ। কেউ আবার আহ্লাদে খাঁচা দুলিয়ে বাড়ির পথ ধরছেন। লোকটা মাঝে মাঝে হাঁক পাড়ছে, “কথা কওয়া টিয়া লাগবে? কথা বলা পাখি?”

লাগবে তো বটেই! দর কেমন?

দেশি বনটিয়ার দাম পাঁচশো থেকে হাজার। পাহাড়ি টিয়ার দাম দেড় থেকে দু’হাজার। ময়নার দর অবশ্য ঠিক হয় খরিদ্দার দেখে। লোকটা কখনও দাম হাঁকে তিন হাজার, তো কখনও নেমে আসে আড়াই হাজারে। সকলেই তাকে ডাকে ‘পাখিদা’ বলে। তার আসল নাম কারও জানা নেই। কোথা থেকে যেন সে এসে উদয় হয়। বিক্রিবাটা সেরে খাঁচা উঠিয়ে গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে চলেও যায়।

এলাকার লোকজন বলছেন, পাখিদার সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জানা গিয়েছে, তার বাড়ি বর্ধমানের নাদনঘাটে। তার সঙ্গে আরও কয়েক জন আছে। যারা তারই মতো সকালে পাখির খাঁচা বস্তায় ভরে উঠে পড়েন কৃষ্ণনগরের বাসে। নবদ্বীপ শহর পার হয়ে চলে আসে ভাগীরথীর এ পারে। তার পর ছড়িয়ে পড়ে নানা এলাকায়। সাধারণত শহর-গঞ্জ এড়িয়ে, গাঁয়ের ভিতরে-ভিতরে। পাখিদাকে বেশি দেখা যায় স্বরূপগঞ্জ, তিওরখালি, আমঘাটা, ভালুকা, তাঁতিপাড়ায়।

তাঁতিপাড়ার বাপি দাস বলছেন, “লোকটা মাঝে-মধ্যেই আসে। ভেবে পাই না, পুলিশ বা বন দফতরের লোকজন থাকতে কী ভাবে এরা এমন বুক ফুলিয়ে এই সব নিষিদ্ধ পাখি বিক্রি করতে পারে?” অনেকেরই সন্দেহ, পুলিশ আর বন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ করেই এই কারবার চলছে। না হলে দিনের পর দিন থাকলে এটা চলতে পারে না।

নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য বলছেন, “বন দফতর এটা দেখে। আমরাও নজর রাখি। আগেও একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” বন দফতরের নদিয়া-মুর্শিদাবাদ ডিভিশনের আধিকারিক রানা দাসের বক্তব্য, “আমরা নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাই। পাখি উদ্ধারের সঙ্গে ধরপাকড়ও হয়। তবে এই বিষয়ে আমাদের কাছে খবর আসেনি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

কর্তাদের পায়ের শব্দেই না টিয়া ফুড়ুত করে গাং পেরিয়ে উড়ে যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE