প্রতীকী ছবি।
ছিল নিছক ফেসবুক গ্রুপ। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যা হয়ে উঠল দুঃস্থ মানুষের জন্য জামাকাপড়ের ব্যাঙ্ক।
যাঁরা শখ করে এক বার নয়, ইতিমধ্যেই বার তিনেক জামাকাপড় বিলানোর কাজ সেরে ফেলেছেন। শুধু তাই নয়, একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে নিজেদের বেশ খানিকটা গুছিয়ে নিয়েছে। প্রথম দু’বার পুরনো জামাকাপড় দিলেও তৃতীয় বারে সংস্থাটি নতুন পোশাক তুলে দিল দেড়শো জন অভাবী মানুষের হাতে। গত ২৩ জানুয়ারি ফেসবুক গ্রুপ ‘প্রিয় নবদ্বীপের’ সদস্যদের তৈরি ওই বস্ত্রব্যাঙ্ক তৃতীয় বস্ত্র বিতরণ করল নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ সভাঘরে।
বছর দুয়েক আগে নবদ্বীপকে ভালবেসে গড়ে উঠে ছিল ফেসবুক গ্রুপ ‘প্রিয় নবদ্বীপ’। শুরু থেকে বাকিদের সঙ্গে বেশ খানিকটা আলাদাই ছিলেন এর সদস্যেরা। জানা গেল, গ্রুপ-অ্যাডমিন সুব্রত পালের প্রস্তাব ছিল, প্রত্যেকের বাড়িতে পড়ে থাকা অব্যবহৃত-পুরনো পোশাক সংগ্রহ করে একটা বস্ত্রব্যাঙ্ক গড়ার। ২০১৭ আগস্টের মাঝামাঝি গ্রুপের দেওয়ালে এই প্রস্তাব জানালোর পরে মিলেছিল বিপুল সমর্থন। আলোচনার পর প্রথম পোশাক সংগ্রহের দিন ঠিক করে দেওয়ালে পোস্ট করতেই নির্দিষ্ট দিনে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। বিপুল পরিমাণ পোশাক নিয়ে। মাত্র তিন দিনেই ভাঁড়ার ছাপিয়ে যায়।
কয়েক হাজার পোশাক নিয়ে তখন নাজেহাল অবস্থা গ্রুপের সদস্যদের। সুব্রত বাবু বলেন, “আমরা সেই সব পোশাকের সাইজ মিলিয়ে হিসাব তৈরি করে ফেলি। আর এক সদস্য নবেন্দু সাহা সন্ধান দিলেন ফাঁকা পড়ে থাকা একটা বাড়ির। নবদ্বীপের বাইরে থাকা সেই বাড়ির মালিক মধুসূদন চৌধুরী সব শুনে হাতে তুলে দিলেন নিজের বাড়ির চাবি।”
সেই শুরু বস্ত্রব্যাঙ্ক তৈরির কাজ।
ইতিমধ্যেই কাদের কাদের ওই ব্যাঙ্কে জমা থাকা বস্ত্র বিতরণ করা হবে, সেই খোঁজও শহর ঘুরে নিয়ে আসেন বস্ত্রব্যাঙ্কের সদস্যেরা।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রথম বিতরণ অনুষ্ঠানে সাতশোর উপর মানুষকে বস্ত্র দেওয়া হয়। এর পরে সেপ্টেম্বরে দেওয়া হয় পাঁচশো মানুষকে।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তৃতীয় বার বস্ত্রব্যাঙ্কের তরফে পোশাক তুলে দেওয়া হল গরিব মানুষের হাতে। গ্রুপ সদস্য রীতিময় সাহা বলেন, “এর আগে আমরা পুরনো পোশাক দিলেও এ বারই প্রথম আমরা প্রত্যেককে নতুন পোশাক দিতে পেরেছি। মোট দেড়শো জন রিকশাচালককে দেওয়া হয়েছে একটি জামা এবং একটি করে লেডিজ় চাদর।”
বস্ত্রব্যাঙ্কের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বহু মানুষ। কোনও এক সময়ে নবদ্বীপের বাসিন্দা, অধুনা প্রবাসী জনৈক সোমনাথ সিকদার পাঠিয়েছেন দশ হাজার টাকা। এ বারে দেড়শো নতুন জামা দিয়েছেন আর এক শুভানুধ্যায়ী রতন সিকদার। আবার, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেশ অগ্রবাল বা দীপক সাহার মতো স্থানীয় মানুষেরা দিয়েছেন নতুন সোয়েটার, নতুন পোশাক কিংবা অন্য কিছু।
মানুষের আগ্রহে নবদ্বীপে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বস্ত্রব্যাঙ্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy