Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঠেলার নাম ‘কর্তা ভিজিট

হুগলির চুঁচুড়া বালিকা বাণী মন্দিরের মিড-ডে মিলের এমন মেনু সামনে আসতেই রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়েছিল। নড়েচড়ে বসেছিল শিক্ষা দফতরও।

স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ক্লাস নিলেন জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক গান্ধর্ব রাঠৌর। রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ক্লাস নিলেন জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক গান্ধর্ব রাঠৌর। রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

কোনও দিন নুন-ভাত, কোনও দিন ফ্যান-ভাতের সঙ্গে আলু সেদ্ধ।

হুগলির চুঁচুড়া বালিকা বাণী মন্দিরের মিড-ডে মিলের এমন মেনু সামনে আসতেই রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়েছিল। নড়েচড়ে বসেছিল শিক্ষা দফতরও। গত ২১ অগস্ট রাজ্যের শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কেমন চলছে তা হাল হকিকত খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারই জেরে আপাতত জেলা কর্তারা কোমড় বেঁধেছেন। শুরু হয়েছে পরিদর্শন। সেই তালিকায় শিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে পা মেলাচ্ছেন জেলাশাসকও।

তবে ওই নির্দেশের সঙ্গে মুর্শিদাবাদে যোগ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর জুজু! তাঁর আসন্ন সফর ঘিরে তড়িঘড়ি জেলার সমস্ত বিদ্যালয়ে মিডডে মিল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, রেশন দোকান, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ কেমন চলছে তা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা ।

শনিবার একদিকে শিক্ষা দফতরের লোকজন স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলে কেমন চলছে তা যেমন খতিয়ে দেখেছেন, তেমনি প্রশাসনের কর্তারা জেলাজুড়ে কাজকর্ম ঘুরে দেখেছেন। যার জেরে স্কুল থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে ছিল সাজো সাজো রব।

ছিল, প্রশাসনের কর্তাদের চোখে যাতে মিডডে মিলের ফাঁক-ফোকর ধরা না পড়া সে জন্য প্রস্তুতিও। কর্তাদের এই ‘ভিজিটে’র প্রস্তুতি খুঁতহীন করতে কোথাও পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার কোথাও বা রোজকার মেনু বদলে পাতে পড়েছে মাংস, ভাত, চাটনি, পাঁপড়, রসগোল্লা।

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলছেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পগুলি যাতে আরও ভালভাবে চলে সে জন্য এই পরিদর্শন। আমরা মাসে দু’বার করে এমন পরিদর্শন করব।’’ তাঁর দাবি, পরিদর্শনে যে সব ঘাটতি, সমস্যা উঠে আসবে সেগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিন শমসেরগঞ্জের কৃষ্ণপুর ঘোষপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মিডডে মিল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে এ দিন পড়াশোনা শিকেয় ওঠে ওই স্কুলে। প্রধান শিক্ষক আব্বাসুদ্দিন বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘মিডডে মিলের পরিদর্শনের জন্য আজকে ব্যস্ত ছিলাম ঠিকই তবে পড়াশোনাও হয়েছে।’’

একই ভাবে ধুলিয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মিডডে মিলের রান্নাঘরে তদারকি করতে দেখা গিয়েছে। সেখানেও পড়াশোনা হয়নি। যদিও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন মণ্ডল বলছেন, ‘‘পড়াশোনা না হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।’’

পরিদর্শনের ঠেলায় জিয়াগঞ্জ মাধবীগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেনু আর পাঁচ দিনের থেকে আলাদা ছিল। এ দিন স্যালাড, লেবু, আলু-চিপস, ভাত, মুগ ডাল, আলুর দম, মুরগির মাংস, চাটনি শেষ পাতে পাঁপড় ভাজা। এ দিন ক্লাস সেরেই স্কুলের এক শিক্ষক ছুটলেন টম্যাটোর চাটনিতে কাজু কুচি, আপেল কুচি মেশাতে।

কর্তারা আসছেন বলেই কি এই ব্যবস্থা? প্রধান শিক্ষিকা প্রীতি রায় বলছেন, ‘‘না না, তা কেন, ছেলেমেয়েদেরও তো মাঝেমধ্যে ভালমন্দ খেতে ইচ্ছে করে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Mid Day Meal inspection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE