Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

টানা দু’রাত বাইক চালিয়ে এলাম বাড়ি

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারবাবাকে সহযোগিতা  করব বলে কাজের খোঁজে নামলাম। কিন্তু আমার কোন কাজ নেই। বোন পড়া ছেড়ে বিড়ি বাঁধতে লাগল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল ইসলাম
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৩:৩৫
Share: Save:

আমরা থাকি ফরাক্কা থানার বেনিয়াগ্রামে। আমি কৃষক পরিবারের একজন। বাবা কৃষি কাজ ছাড়াও ব্যবসা করতেন। নদীর পারে জমিতে ধান, পাট ভালই হোত। জমিতে চাষ করে যে ধান পেতাম, তা থেকে সারা বছর চলে যেত। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। ছোট বোন নবম শ্রেণির ছাত্রী। নদীতে ভাঙন শুরু হওয়ায় আমাদের চাষের জমি গঙ্গায় তলিয়ে গেল। বাবা সারাদিন নদীর ধারে বসে থাকল। সেদিন বাড়িতে রান্না হয়নি।

বাবাকে সহযোগিতা করব বলে কাজের খোঁজে নামলাম। কিন্তু আমার কোন কাজ নেই। বোন পড়া ছেড়ে বিড়ি বাঁধতে লাগল। পাড়ি দিলাম ওড়িশায় এক আত্মীয়র কাছে। সেখানে পৌঁছে আমাকে পুরীতে একটি হোটেলে কাজ দেয়। থাকা খাওয়া সহ মাস মাইনে চলার মতো থাকায় সেখানে থেকে গেলাম। খুব বড় হোটেল না হলেও লোকজন ভালই থাকে। সমুদ্র ও পুরীর মন্দিরের জন্য সারা বছর লোক থাকে। প্রথম মাসের টাকা আমি যখন বাবাকে পাঠালাম বাবা খুব কেঁদেছিল। ছোট ভাইবোনদের পড়া ছাড়তে হয়নি।

লকডাউনে সব বন্ধ হল। হোটেলও বন্ধ। শুধু ভাত খেয়ে দিন কাটাতাম। ঠিক করলাম বাড়ি যাব সে যে করেই হোক। ম্যানেজারের মোটরবাইক ছিল, অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়ে বাইকটা নিয়ে রওনা দিলাম। আমি আর নদিয়ার একজন, দুজনে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কটক পৌছতে পুলিশ একবেলা রেখে ছাড়ল। চা ও বিস্কুট দিয়েছিল দুবার। এক প্রকার না খেয়ে দিন চলে গেল। সন্ধ্যায় ছাড়ার পর সারারাত বাইক চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করলাম। দিঘায় বিশ্রাম করলাম। মুদির দোকান থেকে মুড়ি আর চানাচুর নিয়ে দুজনে খাই। তারপর বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির উদেশ্য। তার পরে দুরাত একদিন বাইক চালিয়ে বাড়ি এলাম।

বাড়ি এসে ঠিক করেছি আর যাব না ভিন্ রাজ্যে। টোটোচালক হয়ে নিজের দেশে থাকব। বাড়ির সবার সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE