Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শ্বাসনালীতে দুধ ঢুকে মৃত শিশু, কী বলছেন চিকিত্সকরা

শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পর ঢেঁকুর তোলানোর কথা বেমালুম ভুলেই গেলেন মা। শিশুকে শুইয়ে দিয়ে গেলেন চিৎ করে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

বাড়ির লোকের সব সময়ে মনে হচ্ছে, বাচ্চা বোধহয় পেট ভরে খাচ্ছে না। রোগা হয়ে যাচ্ছে! তাই জোর করে তাকে ঠেসে ধরে চামচ বা ঝিনুকে দুধ নিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন মুখের ভিতর। চিল-চিৎকার করে ঠেলে-ঠেলে উঠছে শিশু। কিন্তু অভিভাবকেরও জেদ, খাইয়েই ছাড়বেন। শিশু চিকিৎসকেরা বার-বার সতর্ক করছেন এ ব্যাপারে। কারণ, এর থেকেই মারাত্মক বিপদ ঘটে প্রাণ সংশয়ও হতে পারে শিশুর।

শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পর ঢেঁকুর তোলানোর কথা বেমালুম ভুলেই গেলেন মা। শিশুকে শুইয়ে দিয়ে গেলেন চিৎ করে। ফুসফুস বা শ্বাসনালীতে দুধ ঢুকে কয়েক দিন বা কয়েক মাসের শিশুর দম আটকে গেল! কিংবা ধরা যাক, ছোট্ট শিশুকে পাশে নিয়ে শুয়েছেন মা। শুইয়েই বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। সারা দিনের ক্লান্তিতে সেই অবস্থায় মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাঁর স্তনে ঢাকা পড়ে গিয়েছে শিশুর নাক-মুখ। দম নিতে না-পেরে মুখ ভর্তি দুধ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে শিশুর। শিশু চিকিৎসকদের হাতে হামেশাই এ ধরনের ‘কেস’ আসে। তাঁরাই আফসোস করছেন, এখনও সদ্য প্রসূতিদের একটা বড় অংশকে শিশুকে দুধ খাওয়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। শেখানো হয় না ঠিক কী ভাবে বসে এবং শিশুকে কী ভাবে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াতে হবে। ফলে সদ্যোজাতদের অনেকেই দুধ খাওয়ার সময় শ্বাসবন্ধ হয়ে অকালে মারা যায়। ঠিক যেমন মঙ্গলবার ভোর রাতে শান্তিপুর পাঁচপোতা এলাকায় সাড়ে তিন মাসের পাপ্পু মারা গিয়েছে। রাতে তাকে পাশে শুইয়ে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মা পিঙ্কি বিশ্বাস। স্তনে ঢাকা পড়েছিল ছোট্ট শিশুর নাক-মুখ। তার উপর, বেকায়দায় শোওয়ানোর ফলে দুধ চলে গিয়েছিল শ্বাসনালী ও ফুসফুসে।

পাপ্পুর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয় অভিভাবকদের বোকামিতে। তাঁরা শিশুর পিঠ থাবড়ে দুধ নামানোর চেষ্টা করা বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে পরিবারের গুরুদেবের ছবির সামনে শিশুকে শুইয়ে রাখে দীর্ঘক্ষণ। তাঁদের অন্ধবিশ্বাস ছিল, গুরুর কৃপায় শিশু ঠিক হয়ে যাবে। চিকিৎসকেরা যা শুনে আঁতকে উঠেছেন। শিশু চিকিৎসক পল্লব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এতটা আত্মঘাতী কাজ না করলেও অনেকেই জোর করে ঝিনুক দিয়ে শিশুকে দুধ গিলিয়ে দিতে চান। অনেকে আবার শিশু দুধ খেতে গিয়ে বিষম খেলে তাকে কোলে সোজা করে বসিয়ে দেন। এটা একেবারে ভুল। বরং সেই সময়ে শিশুকে একটু কাত করে বা উল্টে দিয়ে পিঠে চাপড় মারতে হবে। মাথায় কখনও চাপড়াতে হবে না।’’ পল্লববাবু আরও জানান, বোতলে দুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই নিপিলের ফুটো দিয়ে কতটা দুধ পড়ছে পরীক্ষা করতে হবে। যদি দেখা যায়, এক সেকেন্ডে এক ড্রপের বেশি দুধ আসছে তা হলে তা ছোট শিশুকে দেওয়া যাবে না।’’ চিকিৎসকদের মতে, রাতে শুয়ে-শুয়ে শিশুকে দুধ খাওয়ানো একেবারেই উচিত নয়। তাতে ক্লান্তিতে মা ঘুমিয়ে পড়লে স্তনের ভারে সদ্যোজাতর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ওভারলাইং।’ বুকের দুধ সবসময় বসে খাওয়াতে হবে। প্রসঙ্গত, কলকাতার এক চিকিৎসক দম্পতির একমাত্র সন্তান এই ভাবে দুধ শ্বাসনালীতে ঢুকে কোমায় চলে গিয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ভেন্টিলেশনে থাকার পরে তার মৃত্যু হয়। শিশু চিকিৎসক প্রফুল্লকুমার মিশ্রের মতে, সময়ের আগে জন্মেছে এমন শিশু বা কম ওজনের দুর্বল শিশুদের দুধ খেতে গিয়ে শ্বাসনালী বা ফুসফুসে দুধ ঢোকার আশঙ্কা বেশি থাকে। শিশুদের দুধ খাওয়ানোর পর তাই অবশ্যই ঢেঁকুর তোলাতে হবে।

সতর্কতা

• সব সময়ে দুধ খাওয়ানোর পরে শিশুর পিঠ চাপড়ে ঢেঁকুর তোলাতে হবে। তার আগে তাকে শোয়ানো যাবে না।

• যতটা সম্ভব চামচে বা ঝিনুক বাটিতে দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। চেপে ধরে শিশুকে খাওয়াবেন না।

• কখনও বেকায়দায় শিশুর শ্বাসনালীতে দুধ চলে গেলে তাকে পাশ ফিরিয়ে বা উপুড় করে পিঠ চাপড়াতে হবে। কখনওই তাকে সোজা করে কোলে নেবেন না।

• কখনও শুয়ে শুয়ে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন না। এতে স্তনে নাক-মুখ ঢেকে শ্বাসরোধ হয়ে শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

• বোতলে দুধ খাওয়ানোর সময়ে নিপল-এর ছিদ্র দিয়ে বেশি মাত্রায় দুধ বেরিয়ে আসছে কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE