Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘ব্রিগেড যাচ্ছি’, ছেলে ফিরল ৮ বছর পর

নদিয়ার করিমপুর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়। দূরত্বটা নেহাতই সামান্য। কিন্তু তা পাড়ি দিতে কেটে গেল আটটা বছর। সেই ফাঁকে গলে গিয়েছে তার শৈশব। আট বছর আগে, সিপিএমের এক ব্রিগেডের দিন পাড়ার বড়দের সঙ্গে পায়ে-পায়ে সে এসেছিল টিটাগড় স্টেশনে। তার পরে হাত ছুটে হারিয়ে যায়। চেপে বসে উল্টো দিকের ট্রেনে।

ঘরে ফেরার আনন্দে। — নিজস্ব চিত্র

ঘরে ফেরার আনন্দে। — নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

নদিয়ার করিমপুর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়।

দূরত্বটা নেহাতই সামান্য। কিন্তু তা পাড়ি দিতে কেটে গেল আটটা বছর। সেই ফাঁকে গলে গিয়েছে তার শৈশব।

আট বছর আগে, সিপিএমের এক ব্রিগেডের দিন পাড়ার বড়দের সঙ্গে পায়ে-পায়ে সে এসেছিল টিটাগড় স্টেশনে। তার পরে হাত ছুটে হারিয়ে যায়। চেপে বসে উল্টো দিকের ট্রেনে। কলকাতা যাওয়ার বদলে চলে যায় রানাঘাট। শিশু কল্যাণ সমিতির হাত ঘুরে ঠাঁই হয় করিমপুরের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হোমে।

মঙ্গলবার শেষ পর্যন্ত দাদার হাত বছর চোদ্দর দেবানন্দ সাউ চলল নিজের বাড়ি। এত দিনে কেন? শিশু সুরক্ষা দফতরের দাবি, নিজের আর বাবার নাম ছাড়া কিছু বলতে পারছিল না দেবানন্দ। বারবার কাউন্সেলিংয়ের পরে একটু একটু করে সে বলতে থাকে। কাউন্সেলর কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস বলেন, “ন’বারের বার ও টিটাগড়ের নাম বলতে পারে। কিন্তু সেটা অনেক বড় জায়গা। আমরা নির্দিষ্ট জায়গাটা চিহ্নিত করতে চাইছিলাম। শেষ পর্যন্ত ৮ অগস্ট দেবানন্দ বলে, তার বাড়ির কাছে একটা শীতলা মন্দির আছে। আর সে নদীতে স্নান করত।”

গত ১৪ সেপ্টেম্বর শিশু সুরক্ষা দফতরের তিন কর্মী দেবানন্দের ছোটবেলার ছবি নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে টিটাগড় শহরের পাঁচটি শীতলা মন্দিরের কাছে গিয়ে জনে-জনে ছবি দেখিয়ে বেড়ান। শেষে এক মন্দিরের কাছে এক প্রবীণ সনাতনের বাড়ির সন্ধান দেন। ব্রহ্মস্থান এলাকায় সেই বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, দেবানন্দের জন্মের পরেই তার মা মারা গিয়েছেন। বাবা মারা যান ২০০৬ সালে। দুই দাদা আছেন। তাঁরাই জানান, ২০০৮ সালে ভাই হারিয়ে গিয়েছিল। পরের দিন কৃষ্ণনগরে এসে এক দাদা তাকে চিনতেও পারেন। মঙ্গলবার নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত দেবানন্দর বড়দা, চটকল শ্রমিক রতন সাউয়ের হাতে তাকে তুলে দেন। দাদার আনা জিনসের প্যান্ট পরে হাসিমুখে বাড়ির দিকে রওনা দেয় দেবানন্দ।

কেন আগেই কাউন্সেলিং করানো হয়নি দেবানন্দকে? নদিয়া জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অপরেশ করের বক্তব্য, “কাউন্সেলর নিয়োগের সুযোগ আগে আমাদের ছিল না। ২০১৫ সালের প্রথম নিয়োগ হয়। তার পর থেকেই চেষ্টা হচ্ছিল।”

করিমপুরের যে দেবানন্দ থাকত সেটির পরিচালন সমিতির সম্পাদক অশোক সরকার অবশ্য দাবি করছেন, “ছেলেটি আগেই জানিয়েছিল যে তার বাড়ি টিটাগড়ে। আমি শিশু কল্যাণ সমিতিকে তা জানিয়েছিলাম।” জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “এ কথা ঠিক নয়। উনি কিছু জানাননি। না হলে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হত।”

তবে ভাইকে পেয়ে এ সবের মধ্যে যেতে রাজি হননি রতন। দেবানন্দকে নিয়ে ট্রেনে ওঠার আগে তিনি বলেন, “অন্য কিছু ভাবছি না। এত দিন পরে ভাই বাড়ি ফিরছে। আর কী চাই!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Missing Teenager returns home Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE