ফের সেই গ্রামীণ ‘বিচার’। ফের মহিলাকে হেনস্থা। এবং ঘটনাস্থল সেই মুর্শিদাবাদ।
এক মহিলার কেটে দেওয়া হয়েছে চুল। মাথায় ঘোল ঢালা হয়েছে। মুখে চুনকালি। গলায় ঝুলছে জুতোর মালা। সেই মহিলার স্বামী নাগাড়ে বাধা দিতে দিয়েছেন। হেনস্থা করা হয়েছে তাঁকেও। শনিবার ভগবানগোলার পাতামারি গ্রামের ওই ঘটনার পরে এমনটাই অভিযোগ করেছেন ওই মহিলার স্বামী।
ওই ঘটনায় গ্রামেরই দশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের বেশিরভাগই মহিলা। শনিবার স্বাধীন সরকার ও শঙ্করী মণ্ডল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার তাদের লালবাগ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
গ্রামবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, শনিবারের ওই ঘটনা তাঁরা সমর্থন করেন না। তা হলে প্রতিবাদ করলেন না কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘সবই তো বোঝেন। এখন জোর যার মুলুকও তার। যারা এটা করেছে তারা প্রভাবশালী। সত্যি কথা বলতে আমাদের বাধা দেওয়ার বা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই। কারণ, আমাদেরও তো এই গ্রামেই থাকতে হবে।’’
অভিযোগ, ওই মহিলাকে যখন অপমান করে এ ভাবে গ্রাম ঘোরানো হচ্ছিল, গোটা গাঁ নেমে এসেছিল রাস্তায়। সেই ভিড়ে কেউ টিপ্পনি কেটেছে, কেউ আবার মোবাইলে সেই দৃশ্য বন্দিও করে রেখেছে। পুলিশ সেই ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখছে আরও কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
গ্রামবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিরাপত্তার কারণে শনিবার ওই মহিলা ও তাঁর স্বামীকে পুলিশ তাদের হেফাজতে রেখেছিল। পুলিশ হয়তো আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করবে। কিন্তু ওই মহিলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা যে ভাবে অপমানিত হলেন, লাঞ্ছিত হলেন, মনের সেই ক্ষত কি কোনও দিন শুকোবে?
দিন চারেক আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ওই মহিলা। তাঁর স্বামীর অভিযোগ, স্ত্রীকে অপহরণ করেছে পড়শি গ্রামের এক যুবক। আর গ্রামবাসীদের দাবি ছিল, অপহরণ নয়, ওই মহিলা স্বেচ্ছায় ওই যুবকের সঙ্গে ঘর ছেড়েছেন। শুক্রবার ওই মহিলা পাতামারি লাগোয়া একটি গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শনিবার তাঁর স্বামী তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। অভিযোগ, তার পরেই শুরু হয় গাঁয়ের ‘বিচার’।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের বিদায়ী উপপ্রধান জামালউদ্দিন বুলবুল বলেন, ‘‘শুক্রবার ওই মহিলা ফিরে পাতামারি লাগোয়া গ্রামে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। শনিবার সকালে তাঁর স্বামী তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পরেই শুরু হয় অত্যাচার। ওই জঘন্য ঘটনার মৌখিক প্রতিবাদ করলেও প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আমার ছিল না। কারণ, উভয় পক্ষই শাসক দলের। বছর তিরিশেক আগে গ্রামে এই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। তার পরে ফের এই ঘটনা।’’
ভগবানগোলা ১ ব্লক মহিলা তৃণমূলের নেত্রী বর্ণালি দাস এই ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই দম্পতি। বর্ণালি-সহ মোট দশ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও জমা পড়েছে। বর্ণালি বলছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে দলেরও কোনও সম্পর্ক নেই। তবে ওই মহিলার সঙ্গে যা ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা করছি।’’ মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘‘বর্ণালি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে জানব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy