Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সয়েল-কার্ড কী, চুপ বহু চাষি

মুর্শিদাবাদের বহু চাষি এখনও সেই স্বাস্থ্য কার্ড হাতে পাননি। ফলে মাটির গুণাগুণ না জেনেই জমিতে সার, অনুথাদ্য দিচ্ছেন। যার নিট ফল, চাষে সাফল্য মিলছে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

মাটির গুণাগুণ জেনে চাষ আবাদ করলে ফসলের উৎপাদন ভাল হয়। এ জন্য বছর চারেক আগে রাজ্যের কৃষি দফতর মাটির স্বাস্থ্য কার্ড (সয়েল হেলথ কার্ড) দেওয়া শুরু করেছিল। মাটির নমুনা সংগ্রহ করে তার পরীক্ষা করে কৃষকদের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া শুরু তখন থেকেই। ওই কার্ডে মাটির স্বাস্থ্য রিপোর্ট যেমন থাকছে, তেমনি সেই জমিতে কি ধরণের সার বা অনুখাদ্য দিতে হবে তার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

তবে মুর্শিদাবাদের বহু চাষি এখনও সেই স্বাস্থ্য কার্ড হাতে পাননি। ফলে মাটির গুণাগুণ না জেনেই জমিতে সার, অনুথাদ্য দিচ্ছেন। যার নিট ফল, চাষে সাফল্য মিলছে না।

ডোমকলের চাষি মন্টু মণ্ডল বলেন, ‘‘সয়েল হেলথ কার্ডের বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু বলেননি। জানিই না তা মাথায় দেয় না খায়!’’ দৌলতাবাদের সুন্দলপুরের কৃষক উজ্জল মণ্ডল বলেন, ‘‘মাটির স্বাস্থ্য কার্ডের জন্য ব্লক কৃষি দফতরে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু কার্ড দেওয়া দূরে থাক, আমাদের এলাকার জমির মাটির নমুনা সংগ্রহ করতেই আসেননি কৃষি বিশেষজ্ঞরা।’’

বুধবার সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, ‘‘সরকার ক্ষমতায় এসে মাটির স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া শুরু করেছে। এক দিকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, অন্য দিকে পরীক্ষাগার থেকে রিপোর্ট এলেই কার্ড দেওয়া হচ্ছে।’’ বিপুল পরিমাণ জমির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কার্ড দিতে তো সময় লাগে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাষিদের কার্ড দেওয়া হবে। তবে একই সঙ্গে সভাধিপতি কৃষকদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মুর্শিদাবাদের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপস কুণ্ডু বলেন, ‘‘জেলার সব চাষযোগ্য জমির মাটি পরীক্ষা করে কৃষকদের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়ার লক্ষ্য মাত্রা নেওয়া হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ চাষযোগ্য জমির নমুনা সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কার্ডও দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, বুধবার মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষ্যে জেলাজুড়ে কৃষকদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। প্রায় ২৬০০ কৃষকের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে গত চার বছরে প্রায় ৩ লক্ষ ৮ হাজার চাষিকে মাটির স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হল।

কৃষিদফতর সূত্র জানা গিয়েছে, আড়াই হেক্টর পিছু একটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে তা বহরমপুরে মাটি পরীক্ষাগারে পাঠান হয়। ওই আড়াই হেক্টর জমির রিপোর্ট একই হয়। যতজন চাষি মাটির নমুনা সংগ্রহের সময় তাঁদের আধারকার্ড, মোবাইল নম্বর জমা দেন তাদের মাটির স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়। কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, আধার কার্ড এবং মোবাইল নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিহার জেরে অনেক চাষি কার্ড থেকে বঞ্চিত হন।

কৃষিদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকে চলতি আর্থিক বছর পর্যন্ত ২ লক্ষ ৬০ হাজার (যা জেলার মোট চাষযোগ্য জমির ৭০ শতাংশ) নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। প্রতি আর্থিক বছরে ৬৫ হাজার করে নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে গত আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৩০ হাজার নমুনা কম সংগ্রহ হয়েছিল। ফলে এ বছর তা বেড়ে এক লক্ষ পাঁচ হাজার হয়েছে। সূত্রের খবর এ বছর প্রায় ৭৪ হাজার নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। বাকিটা চলতি বছরে শেষ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Farmer Soil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE