Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভূস্বর্গে ছিলাম ওঁদেরই অতিথি

গত কয়েক দশক ধরে নদিয়ার বিভিন্ন শহরে ব্যবসা করতে আসেন কাশ্মীরি শালওয়ালারা। দোকান ও বাড়ি ভাড়া নিয়ে কাটিয়ে যান ৬-৮ মাস। এখানেই কার্যত তাঁদের দ্বিতীয় ঘরবাড়ি, তাঁদের রুজিরোজগার।

হামলার ভয়ে বন্ধ হয়নি কাশ্মীরি শালওয়ালাদের দোকান। রানাঘাটে। বৃহস্পতিবার।

হামলার ভয়ে বন্ধ হয়নি কাশ্মীরি শালওয়ালাদের দোকান। রানাঘাটে। বৃহস্পতিবার।

সম্রাট চন্দ ও সৌমিত্র সিকদার
তাহেরপুর-রানাঘাট শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৯
Share: Save:

গত কয়েক দশক ধরে নদিয়ার বিভিন্ন শহরে ব্যবসা করতে আসেন কাশ্মীরি শালওয়ালারা। দোকান ও বাড়ি ভাড়া নিয়ে কাটিয়ে যান ৬-৮ মাস। এখানেই কার্যত তাঁদের দ্বিতীয় ঘরবাড়ি, তাঁদের রুজিরোজগার। এলাকার মানুষের সঙ্গে গাঢ় আত্মীয়তা, পারিবারিক আত্মীয়তা। অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

এতগুলো বছর এই সম্পর্কে কখনও ছেদ পড়েনি। গত সোমবার রাতে তাহেরপুরে এক দল উগ্র, মারমুখী জনতার হাতে এক কাশ্মীরি শালওয়ালার নিগ্রহের ঘটনায় তাই মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ স্থানীয় অনেকেই। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের মাথা হেঁট করে দিয়েছে বলে জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর অন্যায় হয়েছে। লজ্জা করছে আমাদের। ফের এ রকম হামলার চেষ্টা হলে সর্বশক্তি দিয়ে রুখব।’’

সোমবার রাতে যে জনতা শালওয়ালা জাভেদ আহমেদ খানকে মেরে মুখ ফাটিয়ে দেয় তারা ওই অঞ্চলের অন্য একটি বাড়িতেও হানা দিয়েছিল। সেই বাড়িতেও মজিদ ও জাহেদ নামে দুই কাশ্মীরি শালওয়ালা ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হলেও শালওয়ালাদের উপর হামলা হয়নি। জাভেদদের সঙ্গে পুলিশ মজিদ ও জাহেদকেও নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে। ওই বাড়ির মালিক শিবশঙ্কর দে বলেন, “ওঁরা দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের এলাকায় ব্যবসা করেন। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন না। আমাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওঁরা অংশ নিতেন। ওঁদের ছেলেরা আমদের ছেলেদের সঙ্গে খেলা করেছে, ঘুড়ি উড়িয়েছে। হামলার ঘটনাটা মানতে পারছি না।”

শিবশঙ্করবাবুর স্ত্রী মিঠু দে-র কথাতে, ‘‘দুর্গাপুজোর আমরা সব এক সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। হইহই করতাম। কাশ্মীর থেকে কত বার ওঁদের আত্মীয়রা এখানে এসে থেকেছে। পুজোতে ওদের জামাকাপড় দিয়েছি। আমরা কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে ওঁদের বাড়ি থেকেছি।’’

রানাঘাট শহরের বিভিন্ন অংশে কাশ্মীরি শালওয়ালাদের আটটি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ দোকান সুভাষ অ্যাভিনিউতে। দোকানে বসে মহম্মদ এলি বলেন, “১৯৮৪ সাল থেকে আমরা এখানে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি। বছরে ছ’মাস বাড়ি ভাড়া নিয়ে এখানে থাকি। খুব শান্তিতে রয়েছি। আমরা জানি, তাহেরপুরের হামলা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা নিরাপদ।” একই কথা বললেন গোলাম নবী শেখ, “এখানে ত্রিশ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কখনও কোনও অসুবিধা হয়নি। হবেও না।”

রানাঘাট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা পিন্টু সরকার বলেন, “ওদের ব্যবহার খুব ভাল। মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে। ওরা কোন গন্ডগোলে জড়ায় না। ওরা এখানকার বাড়ির অনুষ্ঠানে যায়। ওদের উপর আক্রমনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের এখানে হতে দেব না।”। তিনি বলেন, “সোসাল মিডিয়ার কারনে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভাল হয়।” শ্রীনগরের বাসিন্দা মহম্মদ আশরফ বলেন, ‘‘এখানকার ব্যবসায়ীরা খুব ভাল। ওঁদের সহযোগিতাতেই গত ২৮ বছর থেকে আমরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছি।’’ স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, ফের এই রকম হামলার চেষ্টা হলে তাঁরা রুখে দাঁড়াবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Beating Taherpur Shawl Seller
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE